Image description
চলতি অর্থবছরের নভেম্বরে হঠাৎ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়ে দেন সাধারণ মানুষ » গত নভেম্বরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল । » ডিসেম্বরেও নিট বিক্রি ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ঋণাত্মক হয়েছে ।
দেশে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি ইতিবাচক ধারায় ছিল । কিন্তু গত নভেম্বরে হঠাৎ এ খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে দেন সাধারণ মানুষ । সঞ্চয়পত্র ক্রয় বা নবায়নের চেয়ে আগের সঞ্চয়পত্র ভেঙে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় । এ পরিস্থিতিতে সরকার সুদের হার বাড়িয়েও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে খরা ঠেকাতে পারছে না । মানুষ সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানো বাড়িয়ে দিলে সরকারের দিক থেকে নিট বিক্রি ‘ ঋণাত্মক ’ বলা হয় । বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে , গত ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ঋণাত্মক হয়েছে । এর আগের মাস নভেম্বরেও নিট বিক্রি ৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল । অর্থাৎ ওই দুই মাসে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর চাপ ছিল বেশি ।
 
তথ্য অনুযায়ী , ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ছিল ১ হাজার ২০৪ কোটি বেড়েছে সুদ টাকা । ২০২৪ সালের একই সময় তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা । অর্থাৎ এক বছরের নিট বিক্রির ঋণাত্মক অঙ্ক বেড়েছে ১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা । চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ হাজার ১৮৭ কোটি , দ্বিতীয় মাস আগস্টে ২ হাজার ৩৬ কোটি এবং তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা ইতিবাচক নিট বিক্রি ছিল । তবে নভেম্বরে থেকে তা নেতিবাচক হতে শুরু করে । খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন , গত

নভেম্বরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল । নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে তাঁরা সঞ্চয় করতে পারেননি । আবার গত জুলাই - আগস্টের আন্দোলনে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ধনী গোষ্ঠীর অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন । এ ছাড়া ব্যাংক আমানত ও সরকারের বিল - বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ ব্যাংক ও বিল - বন্ডে স্থানান্তর হয়েছে । এসব কারণে

সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে । চাপ সামলাতে সঞ্চয়পত্রে সুদহার বৃদ্ধি করা হয় । এতে সঞ্চয়পত্রের ভাঙানোর গতি খানিকটা কমেছে । তবে সবকিছু ঠিক থাকলে সামনে সঞ্চয়পত্র বিক্রির খরা কেটে যাবে । বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন , মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে । হাতিয়ার হিসেবে নীতিসুদহার বাড়িয়েছে । এতে ঋণ ও আমানতের সুদহারও বেড়ে যায় । আবার মূল্যস্ফীতি বেশি থাকায় অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলছেন । কিন্তু সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে এবং সঞ্চয়পত্রের সুদহার বৃদ্ধি করা হয়েছে । আশা করা যায় , সামনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়বে । অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে , চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে । সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ( বিনিয়োগ ) সরকারের ঋণ সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে হিসেবে গণ্য হয় , যা বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহার হয়ে থাকে ।

গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা । জানা গেছে , সরকারি ট্রেজারি বিল - বন্ড ও আমানতের সুদ বাড়ার কারণে গত জানুয়ারি থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানো হয়েছে । পরিবার সঞ্চয়পত্রে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ থাকলেও এখন এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে সাড়ে ১২ শতাংশ । আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা আসবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ । পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ । সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ । এই সঞ্চয়পত্র কিনলে এত দিনে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ছিল ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ । পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মেয়াদপূর্তির আগে মুনাফা ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ । জানুয়ারি থেকে এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ । সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ । আর তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে মেয়াদপূর্তির বছরে মুনাফা ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ । জানুয়ারি থেকে এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ । সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ । অন্যদিকে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা আসবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ ।