
নভেম্বরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল । নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে তাঁরা সঞ্চয় করতে পারেননি । আবার গত জুলাই - আগস্টের আন্দোলনে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ধনী গোষ্ঠীর অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন । এ ছাড়া ব্যাংক আমানত ও সরকারের বিল - বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ ব্যাংক ও বিল - বন্ডে স্থানান্তর হয়েছে । এসব কারণে
সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে । চাপ সামলাতে সঞ্চয়পত্রে সুদহার বৃদ্ধি করা হয় । এতে সঞ্চয়পত্রের ভাঙানোর গতি খানিকটা কমেছে । তবে সবকিছু ঠিক থাকলে সামনে সঞ্চয়পত্র বিক্রির খরা কেটে যাবে । বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন , মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে । হাতিয়ার হিসেবে নীতিসুদহার বাড়িয়েছে । এতে ঋণ ও আমানতের সুদহারও বেড়ে যায় । আবার মূল্যস্ফীতি বেশি থাকায় অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলছেন । কিন্তু সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে এবং সঞ্চয়পত্রের সুদহার বৃদ্ধি করা হয়েছে । আশা করা যায় , সামনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়বে । অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে , চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে । সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ( বিনিয়োগ ) সরকারের ঋণ সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে হিসেবে গণ্য হয় , যা বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহার হয়ে থাকে ।
গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা । জানা গেছে , সরকারি ট্রেজারি বিল - বন্ড ও আমানতের সুদ বাড়ার কারণে গত জানুয়ারি থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানো হয়েছে । পরিবার সঞ্চয়পত্রে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ থাকলেও এখন এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে সাড়ে ১২ শতাংশ । আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা আসবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ । পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ । সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ । এই সঞ্চয়পত্র কিনলে এত দিনে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফার হার ছিল ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ । পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মেয়াদপূর্তির আগে মুনাফা ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ । জানুয়ারি থেকে এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ । সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ । আর তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে মেয়াদপূর্তির বছরে মুনাফা ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ । জানুয়ারি থেকে এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ । সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ । অন্যদিকে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা আসবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ ।