Image description
রয়েছে নেতৃত্ব সংকট

অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নেতৃত্ব সংকটে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দুই শক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ দুই সংগঠনের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের পর শীর্ষ নেতৃত্বসহ অধিকাংশ নেতা তাতে পদ পাওয়ায় ভেঙে পড়েছে এর কাঠামো। নতুন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিলেও অভ্যন্তরীণ সংকটে আটকে আছে তা। তবে সাবেক সমন্বয়ক ও দায়িত্বশীলরা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় ‘সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে থাকবে এ দুই সংগঠন। দ্রুত পুনর্গঠন করা হবে এ দুই প্ল্যাটফর্ম।

নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করার পর কমিটি বিলুপ্ত করা না হলেও শীর্ষ পদগুলো ফাঁকা রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। নবাগত দল এনসিপিতে পদ পেয়েছেন আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল এবং মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদসহ সংগঠনটির অনেকেই। এতে ভেঙে পড়েছে সংগঠনটির চেইন অব কমান্ড। গত দুই সপ্তাহে একাধিকবার কমিটি ঘোষণার চেষ্টা করা হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তা করতে পারেনি নীতিনির্ধারকরা।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় সদ্য সাবেক সদস্য সচিব আরিফ সোহেলকে। তিনি একাধিকবার বসেও কমিটি চূড়ান্ত করতে পারেননি। জানা যায়, কমিটি ঘোষণাকে ঘিরে একাধিক ভাগে ভাগ হয়েছে সংগঠনটি। ঘটেছে হাতাহাতির মতো ঘটনা। আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব কে হবেন, সেটা নির্ধারণ করা যায়নি। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করেও প্রকাশ্যে আসে কোন্দোল।

আহ্বায়ক পদে আলোচনায় আছেন সংগঠনটির বর্তমান মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এবং অভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেলের সম্পাদক হাসান ইনাম। জানা যায়, নীতিনির্ধারকরা হাসান ইনামকে চূড়ান্ত করলেও সেটি মানছে না উমামা ফাতেমাসহ একটি অংশ। অন্যদিকে সদস্য সচিব পদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মালিহা নামলাকে চূড়ান্ত করার কথা জানা যায়। তবে আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতে না থাকায় সরাসরি সদস্য সচিব পদে মানতে পারছে না আরেকটি অংশ। এ ছাড়া সদস্য সচিব পদে আলোচনায় আছেন মইনুল ইসলাম ও সিনথিয়া জাহীন আয়েশা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য সচিব ও এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফ সোহেল কালবেলাকে বলেন, কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তবে আমরা সেটি প্রায় সমাধান করে ফেলছি। দ্রুত আমরা কমিটি ঘোষণা করতে পারব বলে আশা করছি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাজে আসবে পরিবর্তন। নতুন করে তারা আর কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা রাজনৈতিক সংগঠন গঠনের উদ্যোগ নেবে না। জুলাইয়ের স্মৃতি রক্ষায় সভা, সেমিনার, শহীদ এবং আহতদের নিয়ে কাজ করবে সংগঠনটি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখতে মূলত সংগঠনটি রাখা হবে। তবে আন্দোলনের সময় যেভাবে সব দলমত নির্বিশেষে তারা সমর্থন পেয়েছিল, এখন বিভিন্ন কারণে সীমিত হওয়ায় নতুন নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

এর আগে রাজনৈতিক দলের গঠনের আগে প্রধান চারটি পদ বহাল রেখে বাকি সব সেল ও শাখা বিলুপ্ত ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সে সময় কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির বাকি সব নেতৃত্ব কাঠামো, নির্বাহী কমিটি, সেল ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তারা নতুন দল গঠনের পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির ফোরাম পরবর্তী নেতৃত্ব কাঠামো নির্ধারণ করবেন।

তবে দল গঠনের প্রায় এক মাস পূর্ণ হতে চললেও এখনো নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি সংগঠনটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভ্যুত্থানের পরিচিত সব মুখ নতুন দল এনসিপিতে যুক্ত হওয়ায় নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় সারির নেতাদের দিয়ে এই প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টা করা হলেও এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি তারা। কমিটি গঠনে তিন সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি সম্ভাব্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের পর ঘোষণা হতে পারে জাতীয় নাগরিক কমিটির নতুন নেতৃত্ব।

জাতীয় নাগরিক কমিটিতে শীর্ষ নেতৃত্ব পাওয়ার দৌড়ে আলোচনায় আছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন প্রীতম, আরিফুল ইসলাম, রুমানা জান্নাত, শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, ফাতেমা তাহসিনসহ অনেকেই।

এ বিষয়ে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন কালবেলাকে বলেন, আমাদের তিন সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি এটি নিয়ে কাজ করছে। আশা করি, দ্রুত এর সমাধান হবে এবং নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেবে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালবেলাকে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ‘সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে থেকে যাবে। আর কোনো দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না। আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের স্বার্থে জাতীয় নাগরিক কমিটি সর্বদা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ভ্যানগার্ড হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে ব্যানারটি, পৃথিবীর অনেক দেশেই গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যে ফোর্সটি রেভুলেশন করে সে ফোর্সটি থেকে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক, একটি ইন্টেলেকচুয়াল জায়গা থেকে তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে ব্যানার, সে ব্যানারটি অবশ্যই অব্যাহত থাকবে। আমরা বলেছি যে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান, গণহত্যার বিচার, আহত এবং শহীদদের নিয়ে এই ব্যানারটি কাজ করবে।