
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের স্বপ্ন নিয়ে রাজধানীবাসী যে আনন্দে ভাসে , তা উবে যায় ঘরমুখী যাত্রার শুরুতেই । এবার ঈদে বাড়ির পানে ছোটা মানুষ ঢাকা থেকে বের হওয়ার পয়েন্টগুলোতে তীব্র যানজটের মুখে পড়তে পারে । সড়কসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেই আভাসই দিচ্ছেন । মহাসড়কে ওঠার পরও স্বস্তির আশা করতে পারবেন না ঢাকা - উত্তরবঙ্গ ও ঢাকা - সিলেট পথের যাত্রীরা । কারণ ওই দুই মহাসড়কে এখনো চলছে উন্নয়নকাজ । উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীরা রাজধানী থেকে বের হতেই গাবতলী , আমিনবাজার ,
বাইপাইল এলাকায় যানজটে পড়তে পারেন । ঢাকা - সিলেট মহাসড়কে চলাচল করা গাড়িগুলো কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম ঢালে , যাত্রামুড়া ব্রিজ , তারাবো বাসস্ট্যান্ড , ডেমরা সেতু , রূপসী বাসস্ট্যান্ড , রবিন টেক্স গার্মেন্টস এবং ভুলতা মোড় পর্যন্ত যানজটের কবলে পড়তে পারে । তবে জট কমাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ নানা ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে । আশার কথা শুনিয়েছেন ঢাকা সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম আজাদ রহমান । তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ ঢাকা থেকে বের হওয়ার রাস্তা সব জায়গায়ই ভালো আছে । যেখানে মেরামত দরকার , সেখানে মেরামতের কাজ চলছে ।
সড়কের সাইন , সিগন্যাল , রোড মার্কিংয়ে নতুন রং করা হয়েছে , যাতে সেগুলো দৃশ্যমান হয় । বিভিন্ন পয়েন্টে যেখানে যানজট হতে পারে , সেগুলো মনিটরিং ( পর্যবেক্ষণ ) করা হবে । গাবতলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত আগে যেরকম জ্যাম হতো , এবার তেমনটা হবে না । বাইপাইল এলাকায় গাড়িগুলো যেন ঠিকভাবে যেতে পারে তার জন্য লেন করে দেওয়া হয়েছে । চন্দ্রায়ও সমস্যা হওয়ার কথা না । যানজটের জন্য ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট একটা বড় ফ্যাক্টর । সড়ক রিলেটেড ( সম্পর্কিত ) সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে । ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ঠিক থাকলে কিছু হবে না । তবে ঈদের সময়
গার্মেন্টসগুলো একসঙ্গে ছুটি হয়ে গেলে ক্যাপাসিটিগত কারণে যানজট হয় । ’ ঢাকা - উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে , ঢাকা - উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের গাড়িগুলোকে সাধারণত গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ও আমিনবাজার ব্রিজ হয়ে যেতে হয় । ফলে এই রুটের গাড়িগুলোকে রাজধানী থেকে বের হতে বেশি বেগ পেতে হয় । এবারও যানজটের আশঙ্কা রয়েছে গাবতলী , আমিনবাজার , সাভার বাসস্ট্যান্ড , নবীনগর , বাইপাইল এবং চন্দ্ৰা এলাকায় ।
ঢাকা থেকে বের হতেই পথে ভোগান্তির ভয়
বিশেষ করে বাইপাইল মোড় এলাকায় সংকুচিত সড়কে দীর্ঘ যানজট হতে পারে । কারণ এখানে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে । রাস্তার মাঝখানে পিলার নির্মাণ হচ্ছে । এই জট চন্দ্রা পার হয়ে ঢাকা - টাঙ্গাইল মহাসড়কে গিয়েও ঠেকতে পারে । ঢাকা - টাঙ্গাইল - যমুনা সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পূর্ব টোলপ্লাজা পর্যন্ত ১৩ . কিলোমিটারে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও উন্নয়নকাজের কারণে যানজট হতে পারে । যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্ত , হাটিকুমরুল মোড় , বগুড়া গাইবান্ধার বিভিন্ন অংশেও সড়কের কাজের কারণে গাড়ি চলাচল ধীর গতির হতে পারে । এই মহাসড়কে মোট ৫৪ টি স্পটে ( স্থান ) যানজটের আশঙ্কা রয়েছে ।
ঢাকা - চট্টগ্রাম মহাসড়ক :
ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের গাড়িগুলো সাধারণত কাঁচপুর ব্রিজ দিয়েই চলাচল করে । ফলে এ রুটের গাড়িগুলো ঢাকা পার হতে যানজটে পড়তে পারে , সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ডে , কাঁচপুর ব্রিজের পূর্ব ঢালে এবং মদনপুর মোড়ে । ঐদিকে কাঁচপুর থেকে মেঘনা ব্রিজের আগপর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ আছে , যেগুলোর কারণে জট হতে পারে । এই মহাসড়কে সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে , দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ ও গৌরীপুর বাজার এলাকায় যানবাহন কিছুটা ধীরগতিতে চলছে । এ ছাড়া চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার ও চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায়ও ঈদ মৌসুমে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে । এই দুটি পয়েন্টেই সড়কের ওপর সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড , রাস্তার পাশের দোকানপাট এবং যাত্রী ওঠানামার কারণে যানজট তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে । এই মহাসড়কে ৪৯ টি স্পটে যানজট হতে পারে । ঢাকা - সিলেট মহাসড়ক : এবারের ঈদযাত্রায় এই মহাসড়ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ ঢাকা - সিলেট চার
লেনের কাজ চলছে । প্রকল্প সূত্র জানায় , এ মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ , নরসিংদী বাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে ১৭ কিলোমিটারে চার লেন প্রকল্পের কাজ চলছে । তাই ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে জট তৈরি হলে এই জট অনেক দীর্ঘ হতে পারে । ঢাকা - সিলেট মহাসড়কে চলাচল করা গাড়িগুলো ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম ঢালে , যাত্রামুড়া ব্রিজ , তারাবো বাসস্ট্যান্ড , ডেমরা সেতু , রূপসী বাসস্ট্যান্ড , রবিন টেক্স গার্মেন্টস এবং ভুলতা মোড় পর্যন্ত যানজটের কবলে পড়তে পারে । সরেজমিনে দেখা যায় , সড়কের কাজ এই সড়কে যানজটের মূল কারণ । এ ছাড়া সড়কের মাঝে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং সড়ক বন্ধ করে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে । এই মহাসড়কে ৪২ টি স্পটে যানজটের আশঙ্কা আছে ।
মহাসড়ক :
চৌরাস্তা
ঢাকা-ময়মনসিংহ ঢাকা - ময়মনসিংহ রুটের গাড়িগুলো সাধারণত উত্তরা , গাজীপুর দিয়ে বের হয় । ফলে এই রুটে বিমানবন্দর বিআরটি করিডর , উত্তরা , আবদুল্লাহপুর , গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় গাড়ির জট তৈরি হতে পারে । এ ছাড়া ভবানীপুর বাজার , হোতাপাড়া , বাঘের বাজার , মাস্টারবাড়ী বাজার , সিড - স্টোর বাজার , ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এসব জায়গায় সড়কে বিকেলের পরে বাজার বসার কারণে যানজট হয় । এই মহাসড়কে ৬ টি স্পটে যানজটের আশঙ্কা আছে । পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা মহাসড়ক : ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা রুটে চলাচল করা যানবাহনগুলো সাধারণত সায়েদাবাদ , দোলাইরপাড় ও পোস্তগোলা হয়ে এবং গুলিস্তান ও বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে । ফলে এসব জায়গায় যানজট হতে পারে । বিশেষ করে সায়েদাবাদ টার্মিনাল এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ে টোল প্লাজায় যানজট হওয়ার বেশি আশঙ্কা রয়েছে । যানবাহনের চাপ বাড়লে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় গাড়ির জট হতে
পারে । এক্সপ্রেসওয়ে পার হওয়ার পর দুই লেন সড়কে বাজার ও অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে জট হতে পারে । হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো . দেলোয়ার হোসেন মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে হাইওয়ে পুলিশ ঢাকা থেকে গাড়ি বের হওয়ার মুখগুলো যানজটমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করবে । এ কাজে চ্যালেঞ্জ তো আছেই , তবে সেগুলোর ওভারকাম হয়ে যাবে আশা করি । ’ যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো . হাদিউজ্জামান বলেন , ‘ সড়কের কোথায় সমস্যা হতে পারে সেটা চিহ্নিত করে সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করলে যানজট এড়ানো সম্ভব । একই সঙ্গে কোন সড়কে কী ধরনের গাড়ি চলতে পারবে , সেটারও নির্দেশনা দিতে হবে । ” ১ কোটি মানুষ রাজধানী ছাড়তে পারে : বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে , এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা থেকে প্রায় ১ কোটির মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারে । এর মধ্যে ১৭ শতাংশ যাবে নৌপথে । ৭ শতাংশ যাবে রেলপথে এবং ৭৫ শতাংশ যাবে সড়কপথে ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ নগরী থেকে বের হওয়া এবং প্রবেশের পথগুলো সংশ্লিষ্টরা কোনোভাবেই যানজটমুক্ত রাখতে পারে প্রতিবছরই যানজট হয় । প্রতিবার বড় বড় সভা হয় , আশ্বাস দেয় , কিন্তু সেই আশ্বাসগুলো কোথাও যেন হারিয়ে যায় । ঈদের প্রস্তুতি সারা বছর থাকলে , ঈদের সময় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হতো না । ’