Image description

মহাসড়কে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় ঈদযাত্রায় বাড়িফেরা মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, ঈদযাত্রা নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রায় এক হাজার ৪০০ ডাকাতের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। বিগত দিনগুলোতে বেশ কিছু ডাকাতির ঘটনা ঘটায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জামিনে মুক্তি পাওয়া ডাকাতদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে ডাকাত নিয়ে ঈদযাত্রায় শঙ্কা, আতঙ্ক থাকলেও পুলিশ বলছে, কিছুদিন আগেও মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও এখন কমেছে। অসংখ্য পেশাদার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সারা দেশের মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাতে টহল বাড়ানো হয়েছে। 

পুলিশের সূত্রগুলো বলছে,  দেশের প্রায় সব মহাসড়কেই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ডাকাতরাই তাদের এলাকার মহাসড়কে ডাকাতি করে। এরমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-বগুড়া, ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-মাদারীপুর মহাসড়কেও এমন ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, মহাসড়কে বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাকে ডাকাতিতে এলাকাভিত্তিক অনেকগুলো চক্র জড়িত। কিছু চক্র শুধু রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকবোঝাই ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে ডাকাতি করে। এসব চক্র গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয়। 

হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে মহাসড়কের প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার রাস্তা ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ঠেকাতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ২১৪টি চেকপোস্ট ও ৮০৩টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করবে। এরমধ্যে হাইওয়ে পুলিশ ২৭৫টি টহল টিম ও ১০০টি চেকপোস্ট পরিচালনা করবে। আর সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ ৫২৮টি টহল টিম ও ১১৪টি চেকপোস্ট পরিচালনা করবে। ঈদযাত্রায় মহাসড়কের দায়িত্বে হাইওয়ে পুলিশের ১৬০৪ জন ও জেলা পুলিশের ২৫২০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়াতে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনীর টহলও মহাসড়কে বাড়ানো হয়েছে। চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। নতুন-পুরাতন ডাকাতদের অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আগেই ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন কিন্তু এখন জামিনে মুক্ত এমন ডাকাতরাও তালিকায় রয়েছেন। 

পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭৪টি। আর জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ৭১টি। এ ছাড়া গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৪৯০টি। একইভাবে ২০২৩ সালে মামলা হয়েছে ৩১৯টি, ২০২২ সালে ৪০৬টি, ২০২১ সালে ৩০৮টি, ২০২০ সালে ৩০২টি ও ২০১৯ সালে ৩৫০টি। এসব মামলার মধ্যে বেশি হয়েছে ঢাকা রেঞ্জ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও ডিএমপিতে। 

বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ মানবজমিনকে বলেন, পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আমাদের অনেক বৈঠক হয়েছে। ডাকাত ও ডাকাতি থেকে সতর্ক থাকার জন্য বলা আছে গাবতলী থেকে যেসব গাড়ি ছেড়ে যায় সেগুলো টিকিট ছাড়া অপরিচিত লোক যেন না উঠানো হয়। যদি স্টাফরা উঠায় আর ডাকাতি হয় তবে তারা দায়ী থাকবে। এভাবেই কড়াকড়ি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কেউ যদি বিপদে পড়েন তবে ৯৯৯-এ যেন ফোন দেন। সতর্ক থাকার কারণে এদিকে গত এক মাসে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রাম রোডে প্রবাসীদের কিছু কিছু গাড়িতে এমন ঘটনা ঘটেছে। এজন্য আমরা সচেতনতার জন্য মাইকিং করছি। 

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম মানবজমিনকে বলেন, যে ঘটনাগুলো এখন পর্যন্ত ঘটেছে সেগুলো আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। কোথায় কোথায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে সেটি জানিয়ে সহযোগিতা করেছি। তারাও সংগ্রহ করেছে। তবে যেভাবে ডাকাতির ঘটনা মাঝখানে বেড়েছিল সেভাবে আবার এখন কমেছে। 
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) রেজাউল করিম মানবজমিনকে বলেন, ডাকাতি বেড়েছিল কিন্তু পুলিশি তৎপরতায় কমেছে। বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে জড়িত সারা দেশ থেকে অসংখ্য ডাকাত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারা দেশের পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা ডাকাতদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশকেও ফোর্স দেয়া হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা মানবজমিনকে বলেন, প্রায়ই আমরা ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছি। ডাকাতের সংখ্যা কমে গেছে। আমরা জামিনে মুক্ত হওয়া ডাকাতদের একটা তালিকা করেছি। তালিকা ধরে জেলা পুলিশও কাজ করছে। তাই ঈদযাত্রায় এতটা শঙ্কা দেখছি না। আমাদের নিজস্ব ফোর্স ও জেলা পুলিশের ফোর্সসহ ৩ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার হাইওয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসপিরাও ডিউটি করেন। তাদের সঙ্গে এডিশনাল ডিআইজি ও ডিআইজিরাও বের হয়ে মনিটরিং করেন। নিজেও বের হয়ে পরিদর্শন করি।