Image description

পৃথিবীর থেকে দূরতম কোনো গ্রহ বা উপগ্রহে একটি পর্যবেক্ষণ যান ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই যান থেকে সময় সময়ে নাসার স্পেস সেন্টারে আসছে গুরুত্বপূর্ণ সব ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য তথ্য। এমন দৃশ্যের সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনা, নকশা ও নির্মাণে এমন একটি বিশেষ যান যদি বিভিন্ন গ্রহে ঘুরে বেড়ায় এবং নানা তথ্য পাঠায়, সেটা নিশ্চয়ই চমকপ্রদ একটি বিষয় হবে।

 
এমনই এক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশি একদল শিক্ষার্থী। আগামী এপ্রিলে তারা নাসার বিখ্যাত হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ (এইচইআরসি)-২০২৫ এর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।
 
আট হাজার প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে পেছনে ফেলে প্রতিযোগিতায় চূড়ান্তভাবে অংশ নেবে ৭২টি দল। চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দলের একটি হলো ড্রিমস অব বাংলাদেশ প্রেজেন্টস বাংলাদেশ মুন ল্যান্ডার রোভার টিম। এটি একটি ঐতিহাসিক অর্জন, কারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত এই দলটিই বাংলাদেশের একমাত্র এবং সর্বকনিষ্ঠদের দল, যারা এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক ইভেন্টে স্থান পেয়েছে।

যেভাবে স্বপ্নযাত্রার শুরু

 

মুন ল্যান্ডার রোভার টিমের চ্যালেঞ্জ ছিল চাঁদ, মঙ্গল এবং তার বাইরের কঠিন ভূখণ্ডে চলাচল করতে সক্ষম একটি মানবচালিত যানের নকশা এবং নির্মাণ। তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি কঠিন আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যার মধ্যে তাদের উদ্ভাবনী যানের নকশার রূপরেখাসহ ১০-পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত গবেষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল।
 
 
অ্যালুমিনিয়াম এবং কার্বন ফাইবারের মতো হালকা ওজনের উপকরণ দিয়ে তৈরি বিশেষ যান ‘মিরাজ-১’ এর উন্নত চাকা এবং সাসপেনশন রয়েছে, যা এটিকে কঠিন ভূখণ্ডে সহজেই পরিচালনা করতে সক্ষম। সম্পূর্ণরূপে নিজস্ব ল্যাবে নির্মিত এই যানটির প্রকৌশল এবং নকশা এটি অনন্য করেছে।
 

 

চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে মিরাজ-১

 

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দলটি ১১-১২ এপ্রিল আলাবামার হান্টসভিলে অবস্থিত ইউএস স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টারে রিমোট-কন্ট্রোলড বিভাগে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় নিজেদের করা নকশায় বিশেষ পর্যবেক্ষণ যান মিরাজ-১ এর প্রদর্শন করবে।
 

 

নাসার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নিয়ে যাচ্ছেন বিশেষ পর্যবেক্ষণ যান। যা হয়তো ঘুরে বেড়াতে পারে চাঁদের বুকে। ছবি ভিডিও থেকে নেয়া

 

অন্য দলগুলোও চাঁদের পরিবেশে মহাকাশযান চালানোর জন্য তাদের ডিজাইন করা যানের প্রদর্শনীতে অংশ নেবে।
 
দলটির মেকানিক্যাল লিড ও ঢাকার সিপিআই পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী মো. রিফাত হোসাইন বলেন, একটি দীর্ঘ পথ পার হয়ে আমরা চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রস্তুত। আগামী ২৮ মার্চ আমাদের দলটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রওনা হবে। আর ১২ এপ্রিল আমরা প্রতিযোগিতায় নিজেদের পরিকল্পনা, নকশা এবং নির্মাণে বিশেষ পর্যবেক্ষণ যানটি প্রদর্শন করবো।
 
‘এটি নিসন্দেহে একটি গর্বের বিষয়। আমরা তরুণ কিছু প্রাণ দেশের হয়ে বিরাট একটি দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত হয়েছি। ভবিষ্যতে রোবোটিক্সে এগিয়ে যেতে এই অংশগ্রহণ অনেক বেশি অনুপ্রণিত করবে,’ বলেন তিনি।
 
 
রিফাত আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের তরুণদের মহাকাশ অনুসন্ধানে অগ্রগামী করা এবং একটি নতুন বৈজ্ঞানিক কৌতূহল ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির যুগ সৃষ্টি করা। নাসার বৈশ্বিক মঞ্চে প্রতিযোগিতা করে আমরা প্রমাণ করতে চাই যে বাংলাদেশও মহাকাশ গবেষণায় অবদান রাখার মতো প্রতিভা এবং সম্ভাবনা রয়েছে।
 

 

মিরাজ-১ এর বাস্তবায়নে যারা

 

মুন ল্যান্ডার রোভার টিমকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার্থী সানজিম হোসাইন; প্রজেক্ট লিড ও সহ-দলনায়ক হিসেবে আছেন বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মাহদির ইসলাম।
 
দলের সেফটি অফিসার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী আন নাফিউ, মেকানিক্যাল লিড ঢাকার সিপিআই পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী মো. রিফাত হোসাইন, টেকনিক্যাল লিড বিএএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী মো. ইয়াসিন আরাফাত, সফ্‌টওয়্যার লিড হিসেবে আছেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী অর্কপ্রতীক আচার্য, দলের ইলেকট্রিক লিড হিসেবে আছেন সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মার্জিয়া আফিফা পৃথিবী।
 
মিরাজ-১ এর ডিজাইন লিড হিসেবে আছেন ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জুনায়েদ।
 

 

নাসার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বাংলাদেশ মুন ল্যান্ডার রোভার টিমের সদস্যরা। ছবি সংগৃহীত

 

অন্য সদস্যরা হলেন- ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আয়েশা জাহার সাফা, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা জাহান শিফা, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত এইচ রহমান ও হাসিন ইশরাক চৌধুরী তাহা।
 
দলটির ম্যানেজার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী শামীম আহনাফ তাহমিদ।

মুন ল্যান্ডার রোভার টিমের পরামর্শক হিসেবে আছেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষক শাহ মো. আহসান সিদ্দিক।
 
 
কোচ হিসেবে আছেন আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মো. মঈন উদ্দিন। আর পরামর্শদাতা হিসেবে আছেন জাওয়াদ রহমান ও মো. ফয়সাল হোসেন।
 
মেন্টর হিসেবে দলটির সঙ্গে আছেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) জাওয়াদুর রহমান ও মো. ফয়সাল হোসেন।