Image description

বর্তমানে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৃহত্তর গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে জনগণ। এর আমরা স্বীকৃতি দিচ্ছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা। জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, পারস্পরিক বিশ্বাস ও স্থিরতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।

বাংলাদেশ জাতিসংঘকে বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে পাশে পাবে। বাংলাদেশে চারদিনের সফরের তৃতীয়দিনে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এসব কথা বলেন।

এ সময়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের প্রতি তার সর্বাত্মক তার সহায়তা থাকবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, এই সফর সরকার এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের কঠিন সময়ে গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রচেষ্টার পাশে দাঁড়িয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে যা যা করা সম্ভব সব তিনি করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে শেষে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ইফতার ও ডিনারে অংশ নেন তিনি। এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সরকারের শীর্ষ স্থানীয় আমলারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

 

এর আগে তিনি রাজনৈতিক দলের নেতা,  নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন গুতেরেস।

 

মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে এগোতে বাংলাদেশের জনগণের আশাবাদ আমাকে চমত্কৃত করেছে। দেশটির জন্য এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় যাচ্ছে। সংস্কার ও পরিবর্তনের পথে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সব ধরনের সাহায্য করবে।

শান্তিরক্ষা মিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় অন্যতম দেশ। শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের অন্যতম বিপদসংকুল জায়গায় কাজ করে থাকে। 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জাতিসংঘের মহাসচিবের এই সফরে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তাত্পর্য রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বের গ্রহণের পর এই সফর দৃশ্যমান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। রোহিঙ্গাদের প্রতি খাদ্য ও মানবিকতা সহায়তা কমে যাওয়ার বিষয়টি বৈশ্বিক ফোরামে তুলে ধরা, সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সমর্থন এবং প্রতিবেশী কোনো দেশকে বার্তা দেওয়া অন্যতম।

 

মহাসচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের বৃহত্তর গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বপ্নকে আমি স্বীকৃতি দিচ্ছি। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সন্ধিক্ষণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ন্যায় সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা। জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, পারস্পরিক বিশ্বাস ও স্থিরতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।

 

তিনি বলেন, জাতিসংঘকে বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ পাশে পাবে। আমরা এ দেশের জনগণের সঙ্গে টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য কাজ করব।

 

অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। এ কাজের মাধ্যমে সংহতি ও মানবিক মর্যাদার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যদিও এটি  দেশের সামাজিক, পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশ্বকে এই উদারতাকে অবহেলা করা উচিত নয়।

 

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে তারা আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে এবং শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ও রাজনৈতিক সহায়তা দেয়।

 

মহাসচিব বলেন, আমরা এখন এক গভীর মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। আন্তর্জাতিক অর্থ কাটছাঁট করেছে। এতে আগের বছরের তুলনায় ২০২৫ সালে ৪০ শতাংশ অর্থ কমবে। এতে খাদ্য সহায়তা ব্যাপকভাবে কমে যাবে। যা একটি চরম মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দৃঢ় আহ্বান, বিপর্যয় এড়াতে তাদের সহায়তা বাড়াতে হবে। জাতিসংঘ বাংলাদেশসহ অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যাতে রোহিঙ্গা সংকটের একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা যায়। এই সমাধান হলো রোহিঙ্গারা নিজ দেশে নিরাপদে, সম্মানের সঙ্গে এবং স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে পারে। তার মতে, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এক সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়াও মিয়ানমারের পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়ছে।  বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে, যা বেসামরিক হতাহতের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সমস্যা বাড়ছে। সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্যোগ নিতে হবে।

গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অন্যতম অবদান রাখছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ও বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করছেন। এ কারণে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তৌহিদ হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত আত্মত্যাগের মাধ্যমে একটি ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হচ্ছে। কঠিন সময়ে গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রচেষ্টার পাশে দাঁড়িয়েছেন মহাসচিব। এ কারণেই তার এই সফর সরকার এবং ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জনগণের আকাঙক্ষা বোঝার জন্য, মহাসচিব তরুণদের, নাগরিক সমাজের সদস্যদের এবং সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশ নিয়েছেন।

 

সংস্কার কমিশন দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের রূপরেখা জুলাই চার্টার প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচনি, প্রশাসনিক, দুর্নীতি বিরোধী এবং পুলিশ সংস্কারে নির্দেশনা দেবে।

 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল মহাসচিব তা অবগত হয়েছেন। তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার জটিলতা উপলব্ধি করেছেন। দেশের প্রকৃত রূপান্তর নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

 

তিনি (গুতেরেস) জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে যা যা করা সম্ভব সব তিনি করবেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবেন। এছাড়াও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চালানো বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ব্যাপারে মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার এই সফর দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। তার সহযোগিতার আশ্বাস আমাদের সংস্কার প্রক্রিয়াকে আরও সফল করবে। জনগণের অভিন্ন আকাঙক্ষার আলোকে আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে আরও সুগম করবে।