Image description

জুলাই অভ্যুত্থানের সাত মাস পার হয়ে গেলেও আন্দোলনকারীদের অনেকেই এখনো নিখোঁজ। এরকম ৩১টি ঘটনা অনুসন্ধান করেছি আমরা—যার মধ্যে ছয়জনকে রায়েরবাজার কবরস্থানে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়েছে, চারজনকে আশুলিয়ায় পোড়ানো মরদেহগুলোর মধ্য থেকে শনাক্ত করা হয়েছে, দুজনের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ১৯ জন আজও নিখোঁজ। হাসপাতালের নথিপত্র ও মরদেহ লুকিয়ে ফেলার মাধ্যমে শহীদদের যেন খুঁজে বের করা না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে বিগত সরকারের পরিকল্পিত প্রয়াসের প্রমাণ মিলেছে এই অনুসন্ধানে। চার পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, কীভাবে হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ নিয়ে যেতে পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি এবং এখনও স্বজনদের মরদেহের অপেক্ষায় কী দুঃসহ দিনযাপন করছেন তারা। আজ তৃতীয় পর্ব

৫ আগস্ট, ২০২৪। সরকার পতনের খবর বিকেলের মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য জায়গার মতো গাজীপুরের রাস্তাতেও হাজার হাজার মানুষের মুখে স্লোগান, 'খবর এলো খবর এলো, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেল।' এই উদযাপনের মধ্যে ছিল ক্ষোভও।

কোনাবাড়ী থানার সামনে এসে একদল ছাত্র-জনতা স্লোগান দিতে শুরু করলে পুলিশ তাদের উদ্দেশ্য করে গুলি চালায়। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও পুলিশ থানা থেকে বের হয়ে তাদের তাড়া করে। আশেপাশের অলিগলিতে ঢুকে তাদের খুঁজতে শুরু করে।

কলেজছাত্র মো. হৃদয় (২০) এমন এক গলিতে আটকা পড়েন। দ্য ডেইলি স্টারের যাচাই করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ তাকে ঘেরাও করে টেনে হিঁচড়ে শরীফ জেনারেল হাসপাতালের সামনের রাস্তায় নিয়ে যায়।

সেখানে তাকে ঘিরে দাঁড়ায় ছয় পুলিশ সদস্য—একজন লাঠি হাতে তার দিকে এগিয়ে যায়, আরেকজন হৃদয়ের শার্ট চেপে ধরে যাতে পালাতে না পারে। এসময় তৃতীয় একজন, কনস্টেবল আকরামকে দেখা যায় বন্দুক উঁচিয়ে ধীরে ধীরে হৃদয়ের পেছনে যেতে। সামনে থেকে এক পুলিশ কর্মকর্তা হৃদয়ের গালে চড় বসান। কিন্তু সেই চড়ের শব্দ ছাপিয়ে যায় গুলির আওয়াজে। পেছন থেকে হৃদয়ের পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালান আকরাম!

হৃদয় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, রক্তে ভিজে যায় রাস্তা। কিন্তু তখনো শ্বাস নিচ্ছিলেন তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তারা চলে যান।

এর কয়েক মিনিট পর কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আবার ফেরত আসেন। দুজন দুই হাত ও দুজন পা ধরে হৃদয়ের নিথর দেহকে পুলিশ লাইনের পেছনে নিয়ে যান। যেখান থেকে তখনো বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হচ্ছিল।

সেখানে আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তা–যাদের মধ্যে একজন সাধারণ পোশাক পরা—তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারা হৃদয়কে টেনে একটি গলির দিকে নিয়ে যান, যা সরাসরি কোনাবাড়ী থানার দিকে গেছে।

 

এরপর হৃদয়কে আর কখনো দেখা যায়নি।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ নথিভুক্ত করে তারাও এই ঘটনাটি তদন্ত করেছে।

 

আমরা পরদিন কোনাবাড়ী থানায় গিয়েছিলাম। সেখানে একটি টেবিলের নিচে হৃদয়ের লুঙ্গি পড়ে থাকতে দেখি।

হৃদয়ের ভগ্নিপতি মো. ইব্রাহিম

ডেইলি স্টারের কাছে ৫ আগস্ট রাতের একটি ভিডিও এসেছে, যেখানে কোনাবাড়ী থানার ভেতরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সেখানে দেখা যায়, থানা প্রাঙ্গণ থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে সাদা গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তিকে দেখা যায় ঘুরাঘুরি করতে।

হৃদয়ের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা নিশ্চিত করেছেন, এই ব্যক্তির নাম আবেদ আলী। থানার সামনের এক দোকানের মালিক তিনি।

গুলি করার পর পুলিশ হৃদয়কে রাস্তা দিয়ে টেনে কোনাবাড়ি থানার দিকে নিয়ে যায়।

ইব্রাহিম ও আরও পাঁচ স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, হৃদয়ের লাশ গুমে পুলিশকে সাহায্য করেছেন আবেদ আলী।

এ বিষয়ে জানতে আবেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো হৃদয়ের পরিবার জানে না হৃদয়ের লাশ কোথায়। সরকারের করা জুলাই শহীদদের তালিকাতেও নেই তার নাম।

সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারটি কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ পায়নি বলেও জানিয়েছেন তার বোন জেসমিন আক্তার।

হৃদয়কে হত্যার অভিযোগে কনস্টেবল আকরাম ও গাজীপুর গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই মামলার তদন্ত চলছে।

হত্যাযজ্ঞ

গাজীপুরে যখন হৃদয় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, সে মুহূর্তে সাভারে চলছে আরেক হত্যাযজ্ঞ।

৫ আগস্ট ঢাকামুখী লংমার্চ ঠেকাতে সকাল থেকেই আন্দোলনকারীদের ওপর লাগাতার গুলি চালিয়ে যায় পুলিশ।

সেদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ছয়টি রক্তমাখা দেহ কার্পেট দিয়ে মুড়িয়ে একটি ভ্যানের ওপর স্তূপ করে রাখছে পুলিশ। এই ছয়জনের মধ্যে অন্তত একজন তখনো জীবিত। তার আঙুল কাঁপছিল। 

পরবর্তীতে ফ্যাক্ট-চেকাররা যাচাই করে দেখেছেন, আশুলিয়া থানার সামনেই ছিল এই লাশবাহী ভ্যান। ভিডিওতে ঢাকা জেলা ডিবির পরিদর্শক আরাফাত হোসেনকে লাশগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান।

তারপর?

আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

আশুলিয়ায় একটি ভ্যানে বেশ কয়েকটি লাশ স্তূপ করে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পরেই আগুন দেয় পুলিশ।

তাদের মধ্যে অন্তত একজন তখনো জীবিত, শ্বাস নিচ্ছেন, নড়ছেন। তাকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।  

তাদের পোড়া দেহাবশেষগুলো থানার পাশেই আমবাগান কবরস্থানে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

পরে কবরস্থান থেকে ছয় জনের মরদেহ তোলা হয়।

তাদের মধ্যে চারজন—আস-সবুর, সাজ্জাদ হোসেন সজল, তানজিল আহমেদ সুজয় ও বায়েজিদ বোস্তামি শনাক্ত হয়েছেন।

তাদের সবার দেহই পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছিল। চেনার কোনো উপায় ছিল না। পুড়ে যাওয়া পোশাকের ধরন ও সঙ্গে থাকা পরিচয়পত্র ও অন্যান্য জিনিস দেখে এই চারজনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় তাদের পরিবার।

বাকি দুজনকে কোনোভাবেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন।

এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্তও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে।

এই মামলায় ডিবি পরিদর্শক আরাফাত হোসেন ও ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

গাজীপুরে হৃদয়ের লাশ গুম ও সাভারের ছয় পোড়ানো লাশ জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সার্বিক গুমচেষ্টার দুটি ক্ষুদ্র নমুনা, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে।

মো. হৃদয়।

জুলাই অভ্যুত্থান সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, 'পুলিশ অনেক বেওয়ারিশ লাশ সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে কয়টি লাশ মর্গে হস্তান্তর করা হয়েছে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না।'

সাভারের ঘটনা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'আন্দোলনকারীরা লাশ পুড়িয়েছে,' এমন গুজব ছড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েই এ কাজ করেছে পুলিশ। 

তবে এখনো সাভারের অন্তত পাঁচজন আন্দোলনকারী নিখোঁজ। তামিম সিকদার, পোশাক শ্রমিক মনিরুজ্জামান মিলন, ওমর ফারুক এবং আবুল হোসেন— তারা সবাই ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার আশপাশ থেকে নিখোঁজ হন। দিনমজুর শাহাদাত হোসেন নিখোঁজ হন এর আগেরদিন, ৪ আগস্ট।

লাশ খুঁজে পাওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়নি পরিবারগুলোকে

১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থেক নিখোঁজ হন সোহেল রানা (২৮) [বিস্তারিত পড়ুন প্রথম পর্বে]।

তার ছোট ভাই মো. নাবিল পরদিন সকালে তাকে খুঁজতে বের হন। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারেননি। যাত্রাবাড়ী তখন রীতিমতো রণক্ষেত্র।

সে রাতেই দেশে কারফিউ জারি করা হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ।

তবুও ২০ জুলাই আবার ভাইয়ের খোঁজে বের হন নাবিল। কিন্তু রাস্তায় তাকে মারধর করে পুলিশ।

পরদিন ২১ জুলাই কারফিউ উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভাইয়ের খোঁজে পৌঁছান তিনি।

'হাসপাতালের মর্গে তখন লাশের স্তূপ। একেকটা ফ্রিজারে দুইটা করে লাশ,' বলেন নাবিল।

তবে সেখানে লাশের স্তূপের মধ্যেও নিজের ভাইকে খুঁজে পাননি।

২১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি আরও বেশ কয়েকবার ঢামেক ও আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কার্যালয়ে যান। কিন্তু কোথাও সোহেলের সন্ধান পাননি।

গত ২১ আগস্ট—হাসিনার পতনের ১৬ দিন ও সোহেল নিখোঁজ হওয়ার ৩৪ দিন পর—ঢামেকে ভাইয়ের ছবি খুঁজে পান নাবিল।

জানতে পারেন, তার ভাইয়ের মরদেহ আঞ্জুমানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আঞ্জুমান তাকে জানায়, ২৪ জুলাই আরও আটজনের সঙ্গে রায়েরবাজারের এক নামফলকহীন কবরে দাফন করা হয়েছে সোহেলকে [বিস্তারিত পড়ুন প্রথম পর্বে]।

আঞ্জুমানের কাছে হস্তান্তরের আগে সোহেলকে নিয়ে শাহবাগ থানার করা 'অজ্ঞাতনামা' সাধারণ ডায়রিটিও আমাদের হাতে এসেছে। সেখানে বলা হয়, কাজলায় বিক্ষোভের সময় ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন সোহেল। এরপর ঢামেকের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

সোহেলের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বুকে একাধিক ছররা গুলির আঘাতে মারা গেছেন তিনি।

তার পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। যার মানে মৃত্যুর আগে নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন তিনি।

ঢামেকের নথি থেকে সোহেলকে যিনি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করি আমরা।

তিনি একজন হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, 'পুলিশ সোহেলকে ধরে প্রথমে বেধড়ক মারধর করে। এরপর একদম কাছ থেকে অনেকগুলা গুলি করে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর কাছে গিয়ে দেখলাম তিনি তখনো শ্বাস নিচ্ছেন। আমি একটা রিকশা করে তাকে ঢাকা মেডিকেলে আনি।'

সোহেল মারা যাওয়ার পরদিন, ১৯ জুলাই দুপুরে উত্তরার বাসা থেকে বের হন গাড়িচালক মো. আসাদুল্লাহ (৩০)। উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর রোডে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

ডেইলি স্টারের যাচাই করা এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তুরাগ থানার ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুরতাফা বিন ওমর ওরফে শাথিল একটি শটগান নিয়ে ওই এলাকার আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় বাসিন্দা ও জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স (জুলাই গণহত্যা নথিভুক্ত করা ছাত্র সংগঠন) জানায়, সেদিন শাথিলের সঙ্গে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, কাউন্সিলর যুবরাজ ও নাইম এবং যুবরাজের ছেলে লিওনও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছেন।

একজন স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মীর কাছ থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শাথিলের ছোড়া গুলি আসাদুল্লাহর গায়ে লেগেছে। তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীও একই দাবি করেছেন।

সেদিন রাতে একজন আন্দোলনকারী ফোন করে আসাদুল্লাহর পরিবারকে জানান, তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

ততক্ষণে কারফিউ জারি হয়ে গেছে।

পরদিন সকালে আসাদের স্ত্রী ফারজানা আক্তার স্বামীর খোঁজে প্রথমে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও পরে ঢামেকে যান।

তিনি যখন মর্গ, জরুরি বিভাগ ও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্বামীর লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন, আসাদ তখনো জীবিত।

ঢামেকের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, আসাদ তখন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বার্ন ইউনিটের শয্যাতেই ২২ জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এর দুদিন পর, ২৪ জুলাই তড়িঘড়ি করে তাকে রায়েরবাজারে দাফন করা হয় [বিস্তারিত পড়ুন প্রথম পর্বে]।

ফারজানা তখনো তার স্বামীকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সূত্রমতে, শাথিলের বিরুদ্ধে মোট ১১টি হত্যা মামলা হয়েছে।

ভিডিওতে থাকা শাথিল ও তার সহযোগী আওয়ামী লীগ কর্মীদের সবাই এখন পলাতক। তাদের কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আসাদ যেদিন গুলিবিদ্ধ হন, সেদিন উত্তরা থেকে ফয়সাল ও গোপীবাগ থেকে রফিকুল নিখোঁজ হন।

তাদের লাশও ২৪ জুলাই বেওয়ারিশ হিসেবে রায়েরবাজারে দাফন করা হয় [বিস্তারিত পড়ুন প্রথম পর্বে]।

এই লাশগুলো শাহবাগ থানা থেকে আঞ্জুমানের কাছে হস্তান্তরের সময় আনুষ্ঠানিক দলিলে লেখা হয়, '(এসব) মৃতদেহের কোনো ওয়ারিশ না পাওয়ায় মৃতদেহগুলো আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের প্রতিনিধিদের কাছে বুঝিয়া দেওয়া হইল।'

কিন্তু বাস্তবে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তখনো হন্যে হয়ে তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তারা কেবল জানতেন না কোথায় তাদের খুঁজতে হবে।

(এই প্রতিবেদনে আমাদের সাভার প্রতিনিধি আকলাকুর রহমান আকাশ ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি মির্জা শাকিল অবদান রেখেছেন।)

[আগামীকাল চতুর্থ পর্বে পড়ুন এখনো স্বজনদের মরদেহের অপেক্ষায় কী দুঃসহ দিনযাপন করছে তাদের পরিবার।]