Image description
 

শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনপুত্র তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পদত্যাগ করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো প্রভাবশালী মন্ত্রণালয় সোহেল তাজের ছেড়ে দেওয়া ছিল বিস্ময়কর ঘটনা। শুধু তাই নয়; ওই সময় রাজনীতি থেকেই সরে যান এই নেতা। তখন শোনা যায় শেখ পরিবারের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে এমন সিদ্ধান্ত সোহেল তাজের।

 

এ বিষয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন সোহেল তাজ। যুগান্তর মাল্টিমিডিয়ায় দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শেখ পরিবারের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের টানাপোড়েন, রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ভুল এবং হাসিনা সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছেন সোহেল তাজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাসান সাইদুল।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকাবস্থায় শেখ ফজলুর করিম সেলিম আপনাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছেন বলে রাজনীতিতে আলোচনা রয়েছে। বিষয়টি সত্যি কিনা? এমন প্রশ্নে সোহেল তাজ বলেন, শেখ সেলিমের সঙ্গে আমার যে ঘটনাগুলো আপনারা শুনেছেন সেগুলো বানোয়াট ঘটনা। আমার মন্ত্রণালয় অনেক হাই বাজেটের মন্ত্রণালয়। এখানে আনসার ছিলো, বিডিআর ছিলো, পুলিশ ছিলো, কারা ব্যবস্থা ছিলো, কোস্টগার্ড ছিলো— বৃহৎ পরিসর নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  এখানে বাজেট কিন্তু অনেক। এই মন্ত্রণালয়ে কিন্তু অনেক মানুষের চোখ থাকে কন্ট্রাক্টগুলো পাওয়ার জন্য।  আমি চেয়েছিলাম এগুলো যাতে সঠিকভাবে, নিয়মমেনে হয়। কিন্তু আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে নোটিশ করেছি, একটি প্রভাবশালী মহল বিশেষ করে একটি পরিবারের সদস্যরা এখানে প্রভাব খাঁটাতে চেষ্টা করেছে। 

এখানে আরও কিছু বাণিজ্য ছিল। এর মধ্যে একটি পুলিশের বদলি বাণিজ্য, যেটা আমি থামিয়ে দিয়েছিলাম।  আমি আমার অধীনস্ত সব প্রধানদের ডেকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিলাম, আজকে থেকে সব বাণিজ্য বন্ধ।  টাকার বিনিময়ে কোনো বদলি হবে না। আর তখনই আমি বুঝতে পারেছিলাম, কার কার স্বার্থে আঘাত লেগেছে। এখানে একটি পরিবারের অনেক সদস্য ছিলেন যারা এগুলো ডিলিংস করতেন। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন তারা পরবর্তীতে এখানে সক্রিয় ছিল। এখানে বড় বড় কন্ট্রাক্ট আছে- র্যাবের হেলিকপ্টার, কারাগার সংস্কার, নতুন কারাগার বানানো, পুলিশ সদস্যদের পোশাক থেকে শুরু করে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ অনেক কিছু। অনেক বড় বাজেটের মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই এসব দুর্নীতিগুলো আমি থামাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি দেখেছি ওই পরিবারের অনেক সদস্য এই দুর্নীতির মধ্যে জড়িত।  

 

সোহেল তাজ বলেন, শেখ সেলিমে সঙ্গে আমার সরাসরি তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু আমি আমার জায়গা থেকে এগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলাম।  আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল, শেখ সেলিমের বেয়াই টুকু সাহেব (ইকবাল হাসান টুকু), যার ওপর বিদেশে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা ছিলো সেসময়। আমাকে ইমিগ্রেশন থেকে ফোন করা হয়েছিল। তখন আমি আবার প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করি যে, উনাকে এরকমভাবে আটকানো হয়েছে।  প্রধামন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, যেতে দিও না।  আমি এটি অনুসরণ করেছিলাম।  এই বিষয়টা নিয়ে শেখ সেলিম হয়তো আমার সঙ্গে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে থাকতে পারেন- আমি জানি না। তবে আমার সঙ্গে সরাসরি কোনো দ্বন্দ্ব হয়নি। 

শেখ পরিবারের মধ্যে বিবেদ নিযে সোহেল তাজ বলেন, শেখ পরিবারের ভেতরেও দুই-তিনটা গ্রুপ আছে। শেখ সেলিম ও শেখ হাসিনার ভেতরেও একটা টানাপোড়ন ছিল। তাই যেহেতু, আমার বিরোধটা হয়েছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে। মানুষ যাতে এটা বুঝতে না পারে, তা ঢাকার জন্য শেখ সেলিমের বিষয়টাকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাহলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হলো।