
মেঝেতে কাপড়ের স্তূপ। ডান-বাঁয়ের দেয়ালেও ঝুলছে নানা রঙ ও নকশার বানানো পোশাক। সেলাই মেশিনের খটখট আওয়াজ চলছে। এর মধ্যেই নেয়া হচ্ছে নতুন পোশাকের ফরমায়েশ। একইসঙ্গে চলছে মাপ অনুযায়ী কাপড় কাটার কাজ। বিরতিহীন সেলাই মেশিনের যান্ত্রিক শব্দ বলছে, দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। ঈদকে সামনে রেখে দর্জির দোকানগুলোতে এমনই চিত্র দেখা গেছে। নতুন পোশাক ছাড়া ঈদ যেন জমেই না। তাই ঈদ উপলক্ষে সবাই নতুন নতুন পোশাক বানাতে ও কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফ্যাশন সচেতন ও রুচিশীল ব্যক্তিরা তাদের পছন্দমতো ফিটিংসে জামাকাপড় বানাতে ছুটছেন দর্জির দোকানে। আগেভাগেই নিজেদের পছন্দের জামাকাপড় বানিয়ে রাখছেন তারা। বাহারি রঙের গজ কাপড় আর নানা নকশার সেলাইবিহীন থ্রি-পিস নিয়ে পছন্দের পোশাক বানাতে সরগরম রাজধানীর দর্জির দোকানগুলো। সেলাই, হাতের কাজ, নকশী সেলাই ও আয়রন এ চারধাপে চলছে ব্যস্ততা।
বৃহসপতিবার সরজমিনে রাজধানীর কয়েকটি দর্জির দোকান ঘুরে দেখা যায়, একদিকে সেলাই মেশিনের খটখট আওয়াজ আর পাশেই চলছে মাপ অনুযায়ী কাপড় কাটা। ফরমায়েশ নেয়া হচ্ছে নতুন পোশাকের। ১২ রমজানের সময়ে এসে মহাব্যস্ত দর্জিবাড়ী। আর এ ব্যস্ততা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। সেলাই করতে আসা নাগরিকরা বলছেন, তাড়াহুড়োতে কাপড় সেলাই অনেক সময় ভুল হয়। যা ঈদের আনন্দকে নষ্ট করতে পারে, সেই চিন্তা থেকেই অনেকে আগেভাগে বানিয়ে ফেলছেন তাদের পছন্দের জামা-কাপড়। শেষের দিকে কাজের অনেক চাপ থাকে কাপড়ের মধ্যে একটু ডিজাইন করতে চাইলে আগেই কাজ করানো ভালো। এবারে দর্জিরা শার্টের মজুরি নিচ্ছেন ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। মেয়েদের থ্রি-পিস সেলাইয়ের মজুরি নিচ্ছেন মানভেদে ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
শনির আখড়া এনেক্স টেইলার্সের জাফর বলেন, সবসময় শবেবরাতেই আমাদের অর্ডার নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ বছর রমজানের প্রথম দিকে আগের চেয়ে তুলনামূলক কাজের চাপ কম ছিল। ১০ রমজানের পর অর্ডার বেশি এসেছে। সবাই ঈদের শপিং ১০ রমজানের পর থেকে করেন। দোকানগুলোতে ঈদের কালেকশন ১০ রমজানের পর থেকেই আসে। এখন ১২ রমজান চলে আমাদের অর্ডার নেয়া প্রায় শেষ আর দুইদিন সর্বোচ্চ অর্ডার নিতে পারবো।
দুপুর বারোটা বিরতিহীনভাবে সেলাইয়ের কাজ করে যাচ্ছিলেন যাত্রাবাড়ীর বোগদাদিয়া টেইলার্সের উজ্জ্বল হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের এ সময়টাতে অর্ডার বেশি আসে। রাত জেগে কাজ করতে হচ্ছে। কাজের চাপের কারণে খাওয়া ও ঘুমের সময় পাচ্ছি না। চাপ একেবার চাঁদরাত পর্যন্ত থাকবে। কোন মডলের কাজ বেশি আসছে সে সমপর্কে তিনি বলেন, এবার পাকিস্তানি থ্রি-পিসের কাজ বেশি আসছে। ১২ রমজান যাচ্ছে আমাদের অর্ডার নেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। যে পরিমাণে কাজের চাপ সে তুলনায় দোকানে কারিগর কম। তিনি আরও বলেন, শার্ট সেলাইয়ে আমরা মজুরি ৩০০-৪৫০ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস মানভেদে ৩৫০-১০০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছি। আমরা চাইলেই বেশি মজুরি নিতে পারি না। আমাদের এখানে যারা আসে তারা সবাই পরিচিত একই এলাকার বাসিন্দা তাই তাদের কাছ থেকে ঈদ উপলক্ষে ১০০-২০০ টাকা চেয়ে নেই।
নবাবগঞ্জ এর সানলাইট টেইলার্সের মালিক রাকিব বলেন, ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে। অনেকেই রেডিমেট জামা পরতে পছন্দ করেন না। নিজের মনেরমতো কাপড় কিনে আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের এমব্রয়ডারি ও কারচুপি নক্শা করিয়ে নেন। এজন্য রমজানের শুরুতেই কাপড় কেনার তাগাদা থাকে অনেকের। আমাদের হাতে আসার পর একেকটা নক্শা করতে অনেক সময় দিতে হয়।
নিউমার্কেটের রাইসা ফ্যাশনের একজন কারিগর বলেন, একটা নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে কাজ করি। যে আমাদের দৈনিক কয়টা কাজ করতে হবে। অর্ডার অনুযায়ী আমরা গুনবো যে, দিনে কয়টা করে করতে হবে। তার ওপর নির্ভর করবে যে আর কোনো অর্ডার নেয়া যাবে কি-না। মেয়েদের থ্রি-পিসের সেলাইয়ে মানভেদে ৩৫০-১০০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছি। আমাদের কাছে যেসব অর্ডার আসছে তার মধ্যে পাকিস্তানি থ্রি-পিস, কারিজমা থ্রি-পিস, আগানুর, সাদা বাহার বুটিক্স ও সাজনা থ্রি-পিসের সেলাইয়ের অর্ডার বেশি আসছে। ঈদের এ সময়টাতে কাজের চাপ বেশি থাকে তাই কারিগর ভাড়া করেছি। নিয়মিত কারিগর দিয়ে এ চাপ সামলানো মুশকিল।
দর্জির দোকানে সিরিয়াল পাওয়া যাবে না তাই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ধানমণ্ডিতে ঈদের পোশাক কেনা শেষে দোকানের বিল চুকিয়ে সরাসরি দর্জির দোকানে চলে এসেছেন শিক্ষিকা শারমিন আক্তার। শারমিন বলেন, রমজানের শেষের দিকে দর্জির দোকানগুলোতে ভিড় বেশি থাকে। পছন্দমতো ড্রেস বানাতে সেজন্য একটু আগেই কিনে রাখা ভালো। কাপড়ের মধ্যে একটু ডিজাইন করতে চাইলে আগেই কাজ করিয়ে নিতে হয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাদেক হোসেন তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন দর্জির দোকানে। তিনি বলেন, পছন্দমতো নক্শা ও ফিটিংসের পোশাক বানাতে সময় লাগে। তাছাড়া তড়াহুড়োতে কাপড় সেলাই করতে অনেক সময় ভুল হয় তাই একটু আগে থেকেই সেলাইয়ের অর্ডার দিতে এসেছেন।