
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারাধীন মামলার চাপ কমাতে সব জেলায় স্বতন্ত্র শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা চান সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আইন সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে। শিশু আইন অনুযায়ী স্বতন্ত্র এ আদালত প্রতিষ্ঠায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের অভিপ্রায় জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের স্বাক্ষরিত চিঠি গত বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানান, সাম্প্রতিক দেশে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি জরুরি বলে অনুধাবন করছেন প্রধান বিচারপতি। এসব ঘটনার বিচার দ্রুত করতে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার চাপ কমাতে চান। এ কারণেই সব জেলায় স্বতন্ত্র শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শিশু আদালতের দায়িত্ব পালন করেন। এর ফলে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার চাপও বাড়ছে। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি অনুধাবন করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারাধীন মামলার চাপ কমানো প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সব জেলায় স্বতন্ত্র শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার চিন্তা করা হচ্ছে।’ সব জেলায় শিশু আদালত প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির এ উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে এমন অনেক উদ্যোগ নিতে আমরা দেখেছি, তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে ওই উদ্যোগ কার্যকর রূপ নেয়নি।’ ২০১৩ সালে শিশু আইন করার পর ২০১৪ সালে সারা দেশে শিশু আদালত গঠন করে তৎকালীন সরকার। তবে ওই সময় সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতকে শিশু আদালত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১৮ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে গঠিত সব নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল শিশু আদালত হিসেবে গণ্য হবে বলে সংসদে বিল পাস হয়। আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে বলা হয়েছে, একদিকে জেলা বিচার বিভাগের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসমূূহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলায় ভারাক্রান্ত, অন্যদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে শিশু আদালতের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট জেলা ছাড়া অন্য সব জেলায় এ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের মানব পাচার মামলার বিচারকাজও করতে হচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এ অবস্থায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে শিশু মামলা বিচারের দায়িত্ব অর্পণ করার ফলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের পক্ষে প্রত্যাশিতসংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে মামলার জট ও মামলার দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে। সুপ্রিম কোর্টের বিবরণী শাখার গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশের সব নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে বলা হয়, শিশু আইন অনুযায়ী শিশুদের মাধ্যমে সংঘটিত যে কোনো অপরাধের বিচার করার জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে শিশু আদালত নামে এক বা একাধিক আদালত থাকার বিধান রয়েছে। ২০১৩ সালে এ আইন করা হলেও এখন পর্যন্ত দেশের কোনো জেলায় স্বতন্ত্র শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের বিবরণী শাখার ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন শিশু মামলার সংখ্যা ৪২ হাজার ৫৬৯টি। চিঠিতে আরও বলা হয়, শিশু আইন, ২০১৩-এর বিধান অনুযায়ী শিশু আদালত দেশের প্রচলিত অন্যান্য আদালতের কাঠামো থেকে ভিন্ন। আইনে শিশু আদালতের স্বতন্ত্র কার্যপ্রণালি সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। এর ফলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান পরিবেশে শিশুদের বিচার করার সুযোগ নেই। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও শিশুদের বিচারের জন্য সব জেলায় স্বতন্ত্র শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।