
শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে দেশ। বিপুল শিক্ষক সংকট থাকলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই নিয়োগে। প্রায় লাখ খানেক চাকরিপ্রত্যাশী অপেক্ষা করছেন ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির জন্য। সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষক সংকট দূরীকরণের জন্য শূন্যপদ খোঁজ করবে সরকার। সরকারি মেডিকেলগুলোর অবস্থা নাজুক। আর সব থেকে করুণ অবস্থায় রয়েছে কারিগরি শিক্ষা।
৩৩ হাজারের কিছু বেশি বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯৬ হাজারের বেশি এন্ট্রি লেভেলের সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য। পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকরা যোগদানের পরও ৭৫ হাজার পদ খালি। সেইসঙ্গে যুক্ত হবে নতুন করে খালি হওয়া শিক্ষকদের সংখ্যা। তিন বছরে কয়েক হাজার শিক্ষকের শূন্যপদ সৃষ্টি হবে তা অনুমেয়। ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ হতে পারে। কারণ, পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির প্রায় ৯৭ হাজার পদের মধ্যে মাত্র সাড়ে ১৯ হাজার পদ পূরণ হয়েছে। আরও ৭৭ হাজার ৫০০ পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর অবসরের কারণে শূন্য হয়েছে আরও ২০ থেকে ২৫ হাজার পদ।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয় কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এজন্য শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম শেষ হওয়ার ২০২৫ সালের মাঝামাঝি ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে।
গত বছরের ৩১শে মার্চ পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ। বিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৭৩৬টি। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের শূন্যপদ ছিল ৪৩ হাজার ২৮৬টি এবং মাদ্রাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ৫৩ হাজার ৪৫০টি। পরে গত ২১শে আগস্ট প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ১৯ হাজার ৫৮৬জন প্রার্থীকে নিয়োগে সম্মতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়। এরপর থেকে পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়াও সরকারি মেডিকেলগুলো ৪৩ শতাংশ শিক্ষক সংকট নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) তথ্যমতে, ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৪৪৬টি পদ রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন ৩ হাজার ৭০০ জন। ফাঁকা রয়েছে ২ হাজার ৭৪৬টি পদ। ভয়াবহ শিক্ষক সংকট শেরেবাংলা মেডিকেলে ৩৪৩টি শিক্ষক পদের বিপরীতে ২০৬টি ফাঁকা। এই অবস্থা দূরীকরণে সম্প্রতি আন্দোলনও করেছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষকের পদ খালি। সারা দেশে তিন ধাপে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও পার্বত্য তিন জেলায় এখনো দেয়া হয়নি সার্কুলার। এছাড়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৯ হাজার ৫৭২টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃজন করা হয়েছে। প্রাথমিকের এক লাখ শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনায় ইতিমধ্যে ৪৫ হাজার ৫২৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাকি প্রায় ৫৫ হাজার শিক্ষক সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছে সরকার।
শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজগুলো। এগুলোর সরকারি হিসাব অনুযায়ীই ৭০ শতাংশ শিক্ষক পদ খালি। জনশক্তি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর অধীন কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষক পদশূন্য। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেবার কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সম্প্রতি বলেন, দেশের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা নির্বিঘ্ন করতে শূন্যপদগুলোতে নতুন নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হবে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে মিডডে মিল চালু করা হয়েছে। যা অনেক শিশুকে উৎসাহিত করবে স্কুল অবস্থান করতে এবং পড়াশোনা চালাতে। এ ছাড়া যেসব শিশুর অর্থনৈতিক কারণে ঝরে পড়ছে তাদের জন্য আলাদা ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর।