
সিলেটে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী (ইউএফপিএ) মো. জাহাঙ্গীর আলমের দাপটে তাঁর স্ত্রী ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ক্লিনিকের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) জোহরা বেগমও বেপরোয়া। সব অনিয়মই তাঁর কাছে নিয়ম। এ রকম আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর সহকর্মী ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে।
সরেজমিনে এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এফডব্লিউভি জোহরা স্বামী জাহাঙ্গীরের ক্ষমতার দাপট দেখান এবং নিয়মিত অফিস করেন না। রোগীদের ঠিকমতো সেবা দেন না। স্বামীর মতো তিনিও খেয়ালখুশিমতো অফিসে আসা-যাওয়া করেন।
সপ্তাহে শুধু শুক্রবার ছাড়া বাকি ছয় দিনই ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ক্লিনিক খোলা রাখা এবং প্রতি মাসে ইউনিয়নের মাঠপর্যায়ে গিয়ে (স্যাটেলাইট) অন্তত চারবার রোগীদের সেবা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু জোহরা এসব নির্দেশনা মানেন না; অথচ মাস শেষে কাগজপত্রে স্যাটেলাইট করেছেন দেখিয়ে সরকারি বিল তোলেন। জালিয়াতি-অনিয়মের মাধ্যমে এই বিল তুলতে সহযোগিতা করেন তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় জোহরার প্রায় ১০ বছরের চাকরিজীবনে কখনো সদর ক্লিনিক শনিবার খোলা রাখেননি এবং নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী কখনো অফিস করেন না বলে সহকর্মী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ। জোহরার ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ক্লিনিকের অধীনে মুহিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কটালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
খিলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটাইটিকর আলী হোসেনের বাড়িতে মাসে চারবার স্যাটেলাইট করার কথা। কিন্তু অনুসন্ধানে ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি (১৩৫ দিন) এবং ২০২৪ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর (১৮৬ দিন) পর্যন্ত এসব জায়গায় তাঁর স্যাটেলাইট করার কোনো তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। তবে কাগজে-কলমে স্যাটেলাইট করেছেন দেখিয়ে স্বামীর মাধ্যমে সরকারি বরাদ্দ তুলেছেন।
এফডব্লিউভি জোহরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শনিবার ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ক্লিনিক বন্ধ রেখে সিলেটে নিজ বাসায় অবস্থান করেন। পরদিন রোববার এক আয়াকে দিয়ে শনিবার রোগী দেখা হয়েছে মর্মে সাধারণ রোগী, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু রোগীদের রেজিস্টারে ২০-৩০ জন করে নাম, ঠিকানা ও ওষুধ বিতরণ দেখিয়ে লিপিবদ্ধ করে রাখেন।
এফডব্লিউভির মূল কাজ অন্তঃসত্ত্বা নারীর চিকিৎসা নিশ্চিত করা। অথচ জোহরা প্রত্যেক অন্তঃসত্ত্বার কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে রোগীদের ‘ব্যবস্থাপত্র’ দেন টাকার বিনিময়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সেবাগ্রহীতার অভিযোগ, ফেঞ্চুগঞ্জ সদর হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত ঝাড়ুদার সুফিয়া বেগমের মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এমআর, ডিএনসি করিয়ে দেন। বিনিময়ে প্রত্যেক এমআর, ডিএনসি রোগীর কাছ থেকে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা এবং ৩-৭ মাসের গর্ভপাত করতে চাইলে প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। এমআর, ডিএনসি করার বিষয়টি অস্বীকার করে সুফিয়া বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে অফিসের কাজে যাই; প্রতিদিন নয়। এসব করিও না, জানিও না।’
জোহরা প্রত্যেক ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভের (বিক্রয় প্রতিনিধি) কাছ থেকে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। একেকটি কোম্পানির ওষুধ লিখে প্রতি মাসে ২-৩ হাজার টাকা ও বিভিন্ন উপহার নেন। এ ছাড়া আইইউডির (অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি) বিভিন্ন জটিলতা দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেন এবং চার ইউনিয়নের সব এফডব্লিউএকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আইইউডির রোগীদের সদর ক্লিনিকে রেফার করতে বাধ্য করেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক ইউনিয়নের এফডব্লিউএ নিজ নিজ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের নিয়ে যাবেন।
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা জোহরা বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এমআর, ডিএনসি আমি করি না। ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভসহ কারও কাছ থেকে টাকা নিই না। শনিবারে ক্লিনিক বন্ধ রাখি না, আমি স্যাটেলাইট করি। সব (অভিযোগ) মিথ্যা ও বানোয়াট।’