
খুলনা জেলায় তিন ফসলি উর্বর জমির প্রায় ৫১০ হেক্টরে চাষাবাদ হয় নানা জাতের শস্য। এসবের মধ্যে ধান, গম, আখ, সরিষা, তিল, ভুট্টা, তরমুজ, বাঙ্গি, ঢ্যাঁড়স এবং বিভিন্ন সবজি অন্যতম। তবে চাষিদের বড় দুঃখের কারণ আঠারোবাঁকি নদী। অবৈধ ইটভাটার দাপটে এই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছে শ্রীরামপুর বিলসংলগ্ন নদীটির ৩ কিলোমিটার অংশজুড়ে থাকা বেড়িবাঁধে। এই বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পৌনে এক কিলোমিটার অংশ প্রতি বর্ষায় পানির চাপে ভেঙে যায়। ভেসে যায় কৃষকের স্বপ্ন।
শ্রীরামপুর বিলটি খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটী ইউনিয়নে অবস্থিত। অভিযোগ রয়েছে, নদীর তীরে থাকা অন্তত সাতটি অবৈধ ইটভাটা ইট ফেলে ধীরে ধীরে নদীতীর দখল করছে। এতে নদীর বিশাল এলাকাজুড়ে বাঁক সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জোয়ারের সময় প্রবল স্রোত বাঁকে এসে ধাক্কা দিয়ে বিপরীত পাড়ে আঘাত করে। এতে ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, উপজেলা প্রশাসন ভেঙে যাওয়া বাঁধের প্লাবন ঠেকাতে তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও সেটি সাময়িক। বাস্তবিক অর্থে তা কোনো কাজে আসে না। তাই বিল বাঁচাতে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করেন কৃষিকাজে নিয়োজিতরা।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, শ্রীরামপুর, নেহালপুর, কিসমতখুলনা ও নৈহাটী অঞ্চলের কৃষক এবং সচেতন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে আঠারোবাঁকি নদীতীরে গড়ে ওঠা কাজী বেলায়েত হোসেন বিকুর এফবিএম, সালাম জমাদ্দারের মেসার্স টাটা ব্রিকস এবং ইসহাক সরদারের আজাদ ব্রিকসের সামনে নদীতীরের বাঁকটি কাটতে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। খননকাজও শুরু হয়। কিন্তু কাজটি মাঝপথেই অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, বিভিন্ন সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধটি সংস্কারে বিল সমিতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা খরচ করলেও তা কাজে আসেনি।
বিলের কৃষক ওমর আলী ফকির বলেন, বিলের মূল সমস্যা হচ্ছে নদীর পাশে থাকা অবৈধ ইটভাটা। প্রতিবছর তারা নদীর তীরে ইট ফেলে জায়গা দখল করছে। ফলে নদীর প্রকৃত গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়ে সরাসরি সুরক্ষা বাঁধে আঘাত করছে।
বিলসংলগ্ন বাসিন্দা আব্দুস ছালাম বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে আমরা আতঙ্কে থাকি। বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর তলিয়ে যায়। ফসল নষ্ট হয়। পাশাপাশি পানি জমে থাকায় সাপ, পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব হয়।
শ্রীরামপুর জেলেপাড়ার (মালোপাড়া) বাসিন্দা ভীম বিশ্বাস বলেন, ইটভাটার মালিকেরা নদীর তীরে তাঁদের অংশে ইট ফেলে তীর ভরাট করছেন। যে কারণে নদীর পানিপ্রবাহের প্রকৃত গতিপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আর আমরা ভাঙনের কবলে পড়ছি। তিনি বলেন, নদীর প্রকৃত গতিপথ ঠিক রাখতে দখলকৃত জমি উদ্ধার করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে এ দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি নেই।
জানতে চাইলে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) আকাশ কুমার কুণ্ডু বলেন, জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি কাজই সম্পন্ন করা হবে। কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে পরিকল্পিত বেড়িবাঁধের আবশ্যকতা বিবেচনায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, প্রয়োজনে উপজেলা প্রকৌশলীকে পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।