
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিতর্কিত রাতের ভোটের নেতৃত্ব দেওয়া সে সময়ের জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্পদসহ নানা অনিয়ম খুঁজতে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাতের ভোটের সেই ডিসিদের অনেকেই ‘ডেভিল ডিসি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
কিছু প্রার্থীর সুবিধার বিনিময়ে রাতের ভোটে অনিয়ম করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন অনেকেই। এবার দুদকের জালে আসছেন সেই ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও সেই সময়ের ডিসিদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিচ্ছে দুদকে। এতে সে সময়ের ডিসিরা আছেন নানা আতঙ্কে। পাশাপাশি অনেকেই আছেন গোয়েন্দা নজরদারিতেও। যে কোনো সময় ওই সময়ের ডিসিদের বাসায় অভিযান হতে পারে। মামলা থাকলে গ্রেপ্তার হতে পারেন কেউ কেউ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সচিবালয় ও দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম যেমন দিনের ভোট রাতে করা, ব্যালট জালিয়াতি, কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট দেখানো, ব্যাপক আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রার্থীকে জেতানোর বিষয়ে দুদকে অভিযোগ জমা হয়। এ ছাড়া জনপ্রশাসন থেকেও এ বিষয়ে ওই সময়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করার কথা জানানো হয়। রাতের ভোটের নেতৃত্ব দেন ওই সময়ে ডিসিরা। আর পুলিশের এসপি রাখেন কার্যকর ভূমিকা। বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের টিম কাজ করছে বলেও জানা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে আছেন সে সময়ের অনেক প্রভাবশালী ডিসি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোটের ডিসির দায়িত্বে থাকাদের মধ্যে ৪৫ জনকে ওএসডি এবং ২১ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ ভোটের দায়িত্ব পাওয়া ডিসির সংখ্যা বেশি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, ২০১৮ সালে বিসিএস ১৭, ১৮, ২০ এবং ২১ ব্যাচের ডিসিরা দায়িত্বে ছিলেন। এর মধ্যে ১৭ এবং ১৮ ব্যাচের চাকরিতে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আর বিসিএস ২০ এবং ২১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানান, সে সময়ের ডিসির অনেকেই প্রচুর অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দেশে বিদেশে নামে বেনামে সম্পদ গড়েছেন। কোনো কোনো ডিসি গ্রামের বাড়িতে করেছেন অট্টালিকা। একাধিক বাড়ি গাড়ি করাসহ অঢেল টাকা বিদেশে পাঠিয়েছেন। অনেকের সন্তান পড়াশোনা করাচ্ছেন বিদেশে।
জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, তারা ঘৃণ্য অপরাধ (অর্থসংক্রান্ত) করেছেন। অনেক কথা বাজারে আছে। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের নানা কথা রয়েছে। যে ঘটনাগুলো সত্যি, শুধু সেগুলো আমরা দুদকে পাঠাব। এক সূত্র জানান, জনপ্রশাসন সচিবের নির্দেশনা মোতাবেক কয়েকজনের নথি পাঠানো হয়েছে দুদকে। এ ছাড়া ওই কর্মকর্তারা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সেজন্য করা হয়েছে নজরদারি। তাঁরা ইউএনও-এসিল্যান্ড থাকার সময়কাল এলাকায়ও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অনেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে জানা গেছে।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ, র্যাবসহ জড়িত সবার বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান করার কথা জানিয়েছিলেন। কার নামে বেনামে কত সম্পদ আছে সেসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা দুর্নীতি করেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তাদের সম্পদসহ সব তথ্য প্রকাশ্যে আসা উচিত। আর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কারণে কোনো ভালোমানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।