Image description
এক মাসে নিবন্ধিত হয়েছে ১৮,৩১০টি নতুন প্রতিষ্ঠান

মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটের পাশাপাশি আয়করের আওতা বৃদ্ধির নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটি বলেছে, আয়কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার ধারাবাহিকতায় আয়কর অব্যাহতির বেশ কিছু বিধান বাতিল ও সংশোধন করা হয়েছে। এমন আরো বেশ কিছু কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর এর কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাটের আওয়তা বাড়ানোর অংশ হিসেবে দেশের সব মহাসড়কে অবস্থিত ভ্যাটযোগ্য হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) অথবা সেলস ডাটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সারা দেশের সব মহাসড়কে অবস্থিত হোটেল রেস্তোরাঁগুলো ইলেকট্রনিক ভ্যাট চালান ইস্যু না করায় সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে ভ্যাট জমা হচ্ছে না মর্মে সচেতন ভোক্তারা অনবরত অভিযোগ করছেন। মহাসড়কের রেস্তোরাঁগুলোতে চব্বিশ ঘণ্টা ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলে। অনেকে ভ্যাট আদায় করলেও সঠিকভাবে তা জমা দেন না।

এনবিআর বলছে, যথাযথভাবে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান দেশের মহাসড়কে অবস্থিত সব হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে ইএফডি/এসডিসি মেশিন বাধ্যতামূলকভাবে স্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের মূসক বাস্তবায়ন অনুবিভাগ থেকে জারিকৃত পত্রে মাঠপর্যায়ের সব কমিশনারদের দেশের সব মহাসড়কে অবস্থিত হোটেল ও রেস্তরাঁগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে ইএফডি/এসডিসি মেশিন স্থাপনের নির্দেশ দেন। একই সাথে প্রতিদিনের লেনদেন নিয়মিতভাবে মনিটর করে যথাযথ পরিমাণ ভ্যাট আদায়ের জন্য জরুরি নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সে লক্ষ্যে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের জন্য নতুন নতুন করদাতা চিহ্নিতকরণ ও ভ্যাটের হার পরিবর্তনের পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকি ঠেকানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছে। এনবিআর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আইনানুগ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে করদাতাদের সাথে সেবামূলক মনোবৃত্তি বজায় রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছে।

দেশের ভোক্তা সাধারণকে মহাসড়কের সব রেস্তোরাঁয় কেনাকাটা করার সময় ইলেক্ট্রনিক চালান বা রসিদ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছে এনবিআর। ভ্যাট চালান গ্রহণ না করলে ক্রেতাগণ যে ভ্যাট পরিশোধ করেছেন তা সরকারি কোষাগারে জমা হবে না। ভ্যাট পরিশোধকারীকে প্রতি মাসে এনবিআর ইএফডি মেশিন জেনারেটেড ভ্যাটের রসিদগুলোর মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী ভ্যাটদাতাগণকে শতাধিক পুরস্কার প্রদান করবে।

এ দিকে এনবিআরের তথ্যে দেখা যায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমন্বিত ভ্যাট প্রশাসন ব্যবস্থা (আইভিএএস) চালুর পর একমাসে রেকর্ড ১৮৩১০টি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে। এর আগে এক মাসে এত বিপুল পরিমাণ নিবন্ধন রেকর্ড হয়নি। দেশের বর্তমান সামগ্রিক পারিপার্শ্বিকতায় নিবন্ধন গ্রহণের ক্ষেত্রে সব করদাতা, বণিক সমিতিগুলো প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। মাঠপর্যায়ের ভ্যাট কমিশনাররা ও তাদের সহকর্মীরা সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছেন।

রাজস্ব আদায় ও করের আওতা বৃদ্ধিতে নতুন নীতি ও দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে গত আগস্ট মাস থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। কর জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের কর্মকর্তারা মাঠে একত্রে কাজ করছে। সম্প্রতি ভ্যাট বাস্তবায়ন বিভাগ থেকে মাঠপর্যায়ে অপারেশন স্কিল বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভ্যাটের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মনিটরিং জোরদার করা হয়। ফলে নিবন্ধন সংখ্যা ও রাজস্ব আদায় আনুক্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

ইতঃপূর্বে, ফেব্রুয়ারি মাসকে কমিশনারদের জন্য নিবন্ধনের মাস হিসাবে ঘোষণা দেয় এনবিআর। সামগ্রিক লক্ষ্যার্জনে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সদস্য (মুসক বাস্তবায়ন ও আইটি) সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফরম আইবিএএস, আইভিএএস এবং জেনেক্সের প্রতিনিধি ও ভ্যাট বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে সম্পৃক্তি, সংযোগ, সমন্বয় রক্ষার জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় প্রায় সতেরটি সিদ্ধান্ত প্রদান করে। এগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি তিনি মাঠ পর্যায়ের কমিশনারদেরকেও সম্পৃক্ত করে প্রযোজ্য নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেন।

তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে ৪৫২০টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হলেও ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ সংখ্যা ১৮৩১০ উন্নীত হয়। প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার ভ্যাটের নিবন্ধনের আওতা ও প্রতিপালন বৃদ্ধিতে ইতোমধ্যে বিদ্যমান ভ্যাট আইনে সংশোধন আনে। এ আইনে কোনো ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকার অধিক হলেই তাকে ভ্যাট নিবন্ধিত হতে হবে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম কমিশনারেটে ৩৭২৬ জন, ঢাকা (দক্ষিণ) কমিশনারেটে ২৫৩৫ জন, ঢাকা (পশ্চিম) কমিশনারেটে ২৪৩১ জন, খুলনা কমিশনারেটে ২১১৪ জন, ঢাকা (উত্তর) কমিশনারেটে ১৮৫৬ জন, যশোর কমিশনারেটে ১৪৭০ জন, রাজশাহী কমিশনারেটে ৮৩০ জন, ঢাকা (পূর্ব) কমিশনারেটে ৮৩৬ জন, কুমিল্লা কমিশনারেটে ১০৭১ জন, রংপুর কমিশনারেটে ১২২৪ জন, সিলেট কমিশনারেটে ২১৭জনসহ মোট ১৮,৩১০ জন ব্যবসায়ী নতুন নিবন্ধন গ্রহণ করেছে।

সাম্প্রতিক এনবিআরের সদস্য বেলাল হোসেন সব ভ্যাট কমিশনারের সাথে একটি জুম সভা করেন। সভায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেন। সভায় তিনি সব কমিশনারকে এআরও, আরওদের প্রান্তিক পর্যায়ে সশরীরে গিয়ে করদাতা সনাক্তকরণ, জুয়েলারি দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেল, শপিংমলের দোকান ও বড় ব্যবসার দোকান ইত্যাদির নিবন্ধন, কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ির মাধ্যমে পরিবাহিত ভ্যাটযোগ্য তামাক বা অন্য পণ্য পেলে ফ্যাক্টরি খুঁজে বের করা, ব্যক্তির ব্যবসায় আয়কর পরিশোধিত হলে তাকে ভ্যাট নেটে নিয়ে আসা, ব্যবসায়ী ও টিআইএনধারীদের ভ্যাট নিবন্ধন প্রদান, শূন্য রিটার্ন পরীক্ষা করে অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ। একই সাথে ফর্ম ৪.৩ পরীক্ষা করে মূল্যস্ফিতি ও আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধি ভিত্তিতে মূল্য ভারসাম্যকরণ ইত্যাদি।

আইবাস সার্ভারের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে সাত মাসে ৬০,০৫৫টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়। এ অর্থবছরে ফেব্রুয়ারিতে ১৮৩১০টি, জানুয়ারিতে ৮০১৮টি, ডিসেম্বরে ৫৩১২টি, নভেম্বরে ৬৪১৪টি, অক্টোবরে ৬১৭১টি, সেপ্টেম্বরে ৭৬৫০টি, আগস্টে ৪২৫৮টি, জুলাইতে ৩৯২২টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিবন্ধন ইস্যু হয়েছিল ৬৮০২৩টি।