Image description
অতি মুনাফার লোভে কৃষক অতিরিক্ত রাসায়নিক ও হরমোন প্রয়োগ করছেন। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বাজারে এলেও এবার ফাল্গুনেই বাজার ছেয়ে গেছে। বরিশালে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। রাসায়নিক সার ও হরমোন প্রয়োগ করা তরমুজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর: বিশেষজ্ঞ

বরিশাল নগরের পোর্ট রোড মোকাম এখন ইলিশের বদলে তরমুজে সয়লাব। রোজায় আগাম এ ফলের যেমন চাহিদা, তেমনি দরও চড়া। কিন্তু শঙ্কার বিষয় হলো, আগাম আসা এ তরমুজের একাংশ এখনো অপরিপক্ব। অতি মুনাফার লোভে কৃষক অতিরিক্ত রাসায়নিক ও হরমোন প্রয়োগ করে বাজারে তুলেছেন। এ কারণে স্বাদের তরমুজ অনেকটা বিস্বাদ। কৃষি কর্মকর্তা ও চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক ও হরমোন প্রয়োগে তরমুজ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

প্রতিবছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রখর রোদে প্রাণ জুড়াতে বাজারে আসত সুস্বাদু তরমুজ। কিন্তু এবার ফাল্গুনেই বাজার ছেয়ে গেছে। মাঠপর্যায়ের চাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের চাষিদের বড় অংশ ধানের আবাদের পরিবর্তে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। এতে দুই ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে এক ফসলিতে।

কৃষি অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট তরমুজ আবাদের ৬৫ শতাংশ হয় বরিশালে। বিভাগের মধ্যে ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা হলো প্রধান আবাদ ক্ষেত্র। এ ছাড়া বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরেও আবাদ হয়। কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে, বিভাগের ছয় জেলায় এ বছর তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমি। তবে আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৮৬৯ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে।

আগাম তরমুজে এবার রমজানের শুরু থেকেই বরিশাল নগরের বাজার চাঙা। মাঝারি আকারের (৬ কেজি ওজনের মধ্যে) তরমুজ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং এর চেয়ে বড় আকার ৪০০ টাকার ঊর্ধ্বে বিক্রি হচ্ছে। কেজি দরে কিনলে প্রতি কেজি ৫০ টাকা। চাষি ও ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার ফলন অতি ভালো হয়েছে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ধলারচর গ্রামের চাষি নাসির হাওলাদার গত শনিবার পোর্ট রোডসংলগ্ন জেল খালে ট্রলার ভরে তরমুজ আনেন। তিনি দেড় একর জমিতে এবার আমনের বদলে তরমুজের আগাম চাষ করেছেন। দেড় হাজার পিস তরমুজ ট্রলার বোঝাই করে নিয়ে এসেছেন। নাসির হাওলাদার বলেন, ‘ফলন আগাম করেছেন, কারণ রোজার মৌসুম ধরতে হবে। ফল সবেমাত্র ওঠা শুরু করেছে।’ তাঁর দাবি, আগাম আনলেও দাম পাচ্ছেন না।

আগাম তরমুজ চাষে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, তরমুজ আবাদে যা খরচ হয়, লাভ হয় তার তিন গুণ বেশি। ফলে তরমুজের আগাম চাষ করতে আমন বাদের প্রবণতা প্রতিবছরই বাড়ছে। এ জন্য তরমুজচাষিরা অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন। ফলে কয়েক বছর পর ওই জমিতে কোনো ফসলই ফলে না। তরমুজে লাভ যেমন বেশি, আবাদ খরচও ধানের চেয়ে অনেক বেশি। তরমুজে কৃষিঋণ নেই। চাষিরা দাদন ঋণে জড়িয়ে পড়ছেন।

বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, আগাম তরমুজ চাষ করলে ভবিষ্যতে আমন আবাদ আশঙ্কাজনক হ্রাস পাবে। আমন আবাদে উদ্বুদ্ধ করতে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে যে তরমুজ আসছে সেগুলো দ্রুত বড় হতে চাষিরা অতিরিক্ত রাসায়নিক ও হরমোন প্রয়োগ করেছেন। এ ধরনের তরমুজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

চাষিদের তথ্যমতে, দক্ষিণাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমের পরপরই আমনের আবাদ হয়। ভরপুর মৌসুম শুরুর আগে তরমুজ বাজারে বিক্রি করতে পারলে দাম বেশি পাওয়া যায়। এ জন্য এ অঞ্চলের চাষিরা তরমুজের আগাম আবাদে ঝুঁকেছেন। তাঁরা জমিতে আমন আবাদ করেন না। কার্তিক-অগ্রহায়ণে তরমুজের আবাদ করেন।

এ বিষয়ে বরিশালের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান বলেন, কাঁচা তরমুজ খেতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু দেখতে হবে আগাম ফলনের জন্য তরমুজে রাসায়নিক সার ও হরমোন প্রয়োগ করা হয়েছে কি না। এমনটা হলে সেই ধরনের তরমুজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।