
ইঞ্জিন সমস্যা এবারও ঈদে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যাত্রীদের ভোগাবে। এমনিতে পুরোনো ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন পরিচালনার কারণে শিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এমনিতে প্রায় সময় বিলম্বিত হচ্ছে ট্রেনযাত্রা। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। প্রতিদিনের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ১০০ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) প্রয়োজন হলেও পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৮০টির মতো। স্বাভাবিক দিনগুলোর চেয়ে ঈদের সময় ইঞ্জিনের প্রয়োজন অনেক বেড়ে যায়। ফলে ইঞ্জিনসংকটের কারণে আসন্ন ঈদযাত্রায় ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে যাত্রীদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ সামনে রেখে পাহাড়তলী ডিজেলশপে পুরোনো ইঞ্জিনগুলো মেরামতের কাজ চলছে। তবে দক্ষ জনবলসংকট এবং ইঞ্জিন মেরামতের জন্য যে মানের যন্ত্রাংশ দরকার সে মানের যন্ত্রাংশের অভাব রয়েছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে যাত্রী পরিবহনে ১১৯টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন। বাস্তবিকভাবে তত ইঞ্জিন নেই। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীন বলেন, ‘ইঞ্জিনের সমস্যা আছে ঠিক আছে, আমরা কিন্তু তার পরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা নতুন নতুন ট্রেনও একের পর চালু করছি। ইঞ্জিন যেহেতু পুরাতন যার কারণে মেরামতও বেশি করতে হচ্ছে। পুরাতন ইঞ্জিন হওয়ার কারণে ঘন ঘন মেরামত করতে হচ্ছে।’
পূর্বাঞ্চল রেলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হাসান মনসুর জানান, দুই প্রকল্পে ৬২৭ কোটি টাকায় কোরিয়ার হুন্দাই রেটেম থেকে ২০টি ইঞ্জিন কেনা হয়েছে। আরও ১০টি ইঞ্জিন কোরিয়া থেকে আসছে। ২০২০ সালে আমদানি করা ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিনের ট্রায়াল রান শেষ হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ইঞ্জিন চালানো হয়েছে। নতুন ইঞ্জিনের গতিসীমা ১০০ কিলোমিটার। এ ৩০টি ইঞ্জিন যুক্ত হলে পূর্বাঞ্চল রেলে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনে গতি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যাত্রীরা বলছেন, সড়কের যানজট এড়িয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্য পৌঁছানোর জন্য সবাই ট্রেন যাত্রাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু এখন প্রতিদিনই চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে; যার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো যাচ্ছে না।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, একটি ইঞ্জিনের মেয়াদকাল ২০ বছর হলেও ১৩৩টি ইঞ্জিনের মধ্যে ৯৪টির মেয়াদ নেই। ১৯৬১ থেকে ১৯৮২ সালে তৈরি ইঞ্জিনও আছে এখানে। এ ছাড়া নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হয়েছে ২০টি। সংকট নিরসনে ১০টি ইঞ্জিন কিনেছিল রেলওয়ে। কিন্তু এ ইঞ্জিনগুলোতে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ সংযোগের অভিযোগ ওঠায় রেলওয়ের শেডে রেখে দেওয়া হয়। অতিরিক্ত ইঞ্জিনসংকটের কারণে সেখান থেকেও ৩-৪টি ইঞ্জিন ব্যবহার করতে হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্র জানান, ইঞ্জিনসংকটের কারণে নতুন ট্রেন চলাচল শুরু করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি, মহানগর প্রভাতি ও তূর্ণা নিশিথা নামে আন্তনগর ৬টি ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামে ১টি মেইল ট্রেনও চলাচল করে। এর মধ্যে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশন ছাড়া কোথাও যাত্রাবিরতি দেয় না। কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারায় চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের পছন্দের তালিকায়ও শীর্ষে এ দুটি ট্রেন। ফলে এ দুটি ট্রেনের টিকিট নিয়ে বেশি কাড়াকাড়ি ও কালোবাজারি হয়। এ রুটে কমপক্ষে আরও ৫টি আন্তনগর ট্রেনের চাহিদা থাকলেও ইঞ্জিনসংকট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।