
গণহত্যার জন্য কোনো প্রকারের অনুশোচনা বা দুঃখ প্রকাশ না করে বরং আন্দোলনকারীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া এবং দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা উসকে দেওয়ার অপকর্মে জড়িত থাকায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে। বলা হচ্ছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত হওয়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ফ্যাসিস্ট দলগুলোর যে পরিণতি হয়েছে, আওয়ামী লীগেরও সেটাই হতে হবে।
জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমন করতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এতে ১৪শ’র বেশি মানুষ নিহত হয় বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ছাত্র-জনতার দাবি অনুযায়ী শহীদের সংখ্যা দুই হাজারের কাছাকাছি।
অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে পালিয়ে যায় তার দলের মন্ত্রী, এমপি ও হাজার হাজার নেতাকর্মী। এখন দেশের বাইরে থেকে তারা বিভিন্নভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
দলটি নিষিদ্ধ হলে তাদের সাধারণ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের অবস্থান কী হবে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ।
অনেকে বলছেন, গণহত্যায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের পরিণতি জার্মানি-ইতালির ফ্যাসিস্ট দলের মতো হওয়া উচিত। আবার কেউ কেউ বলছেন, গণহত্যায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতাদের বিচারের মাধ্যমেই তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলে তাদের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলের ইতি ঘটে। তার আগে গদি টিকিয়ে রাখতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে দেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক হত্যাযজ্ঞ চালায় হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী ও তার দলীয় ক্যাডাররা।
শিক্ষার্থীদের হাত ধরে জুলাই আন্দোলনের শুরুটা ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে। এই আন্দোলনকারীদের শেখ হাসিনা ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে কটূক্তি করলে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অগ্নিগর্ভ হলে আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে হাসিনার সরকার। একইভাবে লেলিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের। তাদের উন্মত্ততায় রাজপথে বয়ে যায় রক্তের নদী। এক পর্যায়ে আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে। তীব্র জনরোষের মুখে শেখ হাসিনা আর টিকতে পারেননি। পালিয়ে যান ভারতে। তার আগে-পরে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতা-কর্মী।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থান চলাকালে এক হাজার ৪শর বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো সামরিক অস্ত্র ও শটগানের গুলিতে মারা যান। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা গুরুতর আহত হয়েছেন। পঙ্গু হয়েছেন অনেকেই। অনেকের দুই চোখ, কারো কারো এক চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। ১১ হাজার সাতশর বেশি মানুষকে র্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। নিহতদের মধ্যে ১১৮ জনই শিশু।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও আওয়ামী লীগ নৃশংসতা চালিয়েছে। আর এই হত্যাযজ্ঞে সমন্বয়ের ভূমিকায় ছিলেন খোদ শেখ হাসিনাই।
নিষিদ্ধের দাবি বিভিন্ন মহলে
এমন ভয়াবহতম নৃশংসতার কারণে হাসিনার সরকারের পতনের পরই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জার্মানির নাৎসি পার্টি ও ইতালির ফ্যাসিস্ট পার্টির মতো ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, গণঅধিকার পরিষদ, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন মহল দাবি করে আসছে, আগামীতে আওয়ামী লীগ যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, এজন্য দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল করা হোক।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ‘ঐকমত্য’ তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুঁয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।
পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পরিচয়ে কারো নির্বাচন করার সুযোগ পাওয়া উচিত না।
আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদ হওয়া মো. হাসানের মরদেহ কাঁধে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ওই কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা হোক। কেউ যদি অন্য কিছুর দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে, তবে জুলাইয়ে যেমন দুই হাজার শহীদ হয়েছি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনে আরও দুই হাজার জীবন দেব। তবুও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার লড়াই চালিয়ে যাব। ’
এর আগে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক, ইনকিলাব মঞ্চসহ আরও কিছু রাজনৈতিক সংগঠন ও প্লাটফর্ম থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ওঠে।
গণহত্যায় জড়িতদের বিচারে জোর
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি জনগণের সমর্থন আছে কি না তার ওপর নির্ভর করে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নির্ভর করে জনগণের সমর্থনের ওপর, জনগণের সমর্থন যদি থাকে। সেজন্য দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতারাও নিষেধাজ্ঞার পক্ষে এখনই সরাসরি অবস্থান প্রকাশ করছেন না।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির গুলশানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কোন পার্টি নিষিদ্ধ হবে, কোন পার্টি কাজ করবে, কোন পার্টি কাজ করবে না... জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। ’
বিশ্লেষকদের মতে, কেউ কোনো অপরাধ করে থাকলে আইন আছে, আইনের আওতায় তার বিচার হবে। যে কোনো অপরাধের বিচারের সুযোগ আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের যে মন্ত্রী-এমপি এবং দলীয় ক্যাডাররা সরাসরি হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছেন তাদের বিচার নিশ্চিত করা গেলেই দলটির এক প্রকার সাজা হয়ে যাবে। যেহেতু তাদের পুরো হাইকমান্ডই হত্যাকাণ্ড সমন্বয়ে ছিল, সেহেতু বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তাদের সবাইকেই শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের জন্য সরকারের পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাজ করছে। এরই মধ্যে শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রী-নেতাদের বেশ কিছু মামলায় আসামি করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে প্রতিক্রিয়া কী হবে
গণদাবির মুখে যদি সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটে, সেক্ষেত্রে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলেরও নানা আলোচনা আছে। এমন সিদ্ধান্তে দলটির নেতা-কর্মী-সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতিক্রিয়া ও চাপের বিষয় রয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের হ্যাঁ/না অবস্থানেরও বিষয় থাকবে।
আওয়ামী লীগের সমমনা মহল মনে করে, দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। তাদের লাখ লাখ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষী আছে। দলটির একটি নির্দিষ্ট ও বড়সড় ভোট ব্যাংকও আছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, মোট ভোটের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আওয়ামী লীগের রিজার্ভ ভোট। আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটের হার ছিল শতকরা ৪৮ ভাগ। তার আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট পায়।
শেখ হাসিনা ও তার বলয়ের হাইকমান্ড একগুঁয়ে সিদ্ধান্তে গিয়ে ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ড চালালেও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বড় একটি অংশের এতে সায় ছিল না। এমনকি খোদ আওয়ামী লীগ পরিবারেরও অনেকে জুলাই অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় নামেন।
সে হিসেবে হাসিনা ও তার সিন্ডিকেটের নৃশংসতার জন্য এমন বড় একটি দলকে নিষিদ্ধ করা হলে দেশের অভ্যন্তরে প্রতিক্রিয়া কী হবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভাবতে হবে। আবার এ ধরনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক দিক থেকেও ইতিবাচক/নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার বাইরে আওয়ামী লীগের উগ্রচিন্তার কিছু কর্মী-সমর্থককের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও সিদ্ধান্ত গ্রহণে মাথায় রাখতে হবে। কারণ এদের একটি অংশ মনে করে, হাসিনার নৃশংসতা ন্যায্য ছিল এবং তার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে এরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজমের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে অস্থিরতা তৈরিতেও উসকানি দিচ্ছে। দলটিকে নিষিদ্ধ করলে এরা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করতে পারে। অনেকেই বিশৃঙ্খল হয়ে উঠবে। দলটির কর্মীরা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে। ‘হাসিনার অনুপস্থিতি মঙ্গলকর নয়’ প্রমাণে এরা দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে সন্ত্রাসের, সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে।
এতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতিসহ সার্বিকভাবে আরও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। তাছাড়া নির্বাচনের সময় ভোটারদের যে অংশটি আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত, তাদের অধিকাংশই নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে, যা অংশগ্রহণমূলক বা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।
বিভিন্ন মহল থেকে নিষিদ্ধের দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সরাসরি কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নিষিদ্ধ হলে তাদের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক এবং ভোটার কী করবেন বা অন্য কোনো দলে যোগ দেবেন কি না তা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। তবে দলটির নেতারা মনে করেন, তাদের কর্মী-সমর্থকরা কোনো দলে যাবেন না। কষ্ট সহ্য করে হলেও নিজেদের অবস্থানে টিকে থাকার চেষ্টা করবেন। দুই-চারজন নেতা-কর্মী অন্য দুই-একটি দলে চলে যেতে পারেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে গা বাঁচাতে কৌশল হিসেবে তারা এটা করতে পারেন। আর দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় কিছু লোক সুবিধা নিতে এ দলে ঢুকে পড়ে। পাশাপাশি এই সময় দলের মধ্যেই কিছু সুবিধাভোগী তৈরি হয়েছে। এই সুবিধাভোগীদের কেউ কেউ কৌশলে যেদিকে আবার সুবিধা পাওয়া যাবে সেই দিকে ঝুঁকে পড়বে। এতে আওয়ামী লীগের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবে না।
দলটির ওই নেতারা আরও মনে করেন, বিদ্যমান পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের মতো দলকে নিষিদ্ধ করেও রাখা যাবে না। আওয়ামী লীগ আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এই মনোবল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে, আবার সেই বিপর্যয় কাটিয়ে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দল হারিয়ে যায়নি, নেতা-কর্মীরাও অন্য দিকে চলে যাননি। তখনো অল্প কিছু সুবিধাবাদী অন্য দলে গিয়ে ভিড়েছে, ভবিষ্যতেও সেটা হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ৭৫ পরবর্তী পরিস্থিতি আর ২৪ পরবর্তী পরিস্থিতি আলাদা বিষয়। পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। কিন্তু এবার দলটির প্রথম সারির প্রায় সব নেতাসহ হাজার হাজার নেতকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়াতে কত সময় লাগবে বা তারা আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
তাছাড়া ২০০৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যে ভোটব্যাংক ছিল বর্তমানে তা আছে কি না তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। কারণ ২০১৪, ২০২১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটে তথাকথিত ভোটব্যাংকের ভোটাররাও ভোট দিতে যায়নি। আর ২০২৪ এর অভ্যুত্থানে গণহত্যার কারণে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কতখানি বাকি আছে তাও ভেবে দেখার বিষয়।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে এর প্রতিক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। এটা রাজনৈতিক বিষয়, রাজনীতিবিদরা ভালো বলতে পারবেন। তাছাড়া নিষিদ্ধ হলে কী হবে সেটা বিশ্লেষণ করার মতো বা এ এখনই কিছু বলার সময়ও আসেনি। তাই আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।