Image description
শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সাত সদস্যসহ রাজউক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছয় মামলার অভিযোগপত্রে অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক তার বোনকে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তরে যে নোটারি ব্যবহার করেছেন, তদন্তে তা ‘ভুয়া’ প্রমাণিত হওয়ার তথ্য দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক বলছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে করা একটি মামলার তদন্তে নেমে তারা এ তথ্য পেয়েছে।

গত ১৩ জানুয়ারি টিউলিপের মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করে দুদক। এসব মামলায় শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককেও আসামি করা হয়। এর মধ্যে রূপন্তীর বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তে নেমে ‘ভুয়া নোটারি’ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলছে দুদক।

এ মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, হেবা দলিলটি হয় ২০১৫ সালের ৯ জুন। সেখানে দাতা ছিলেন রিজওয়ানা সিদ্দিক (টিউলিপ সিদ্দিক); গ্রহীতা ছিলেন আজমিনা সিদ্দিক। দলিলে বলা হয়, ‘বোনের প্রতি ভালবাসা ও স্নেহ‘থেকে সম্পত্তি হেবা দিতে চান দাতা।

দলিল অনুযায়ী, ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় কেনা গুলশানের ফ্ল্যাটটি আজমিনা সিদ্দিককে দেওয়া হয়। দলিলে ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ মালিকানা, স্বত্ব, অধিকার এবং একটি পার্কিং স্পেস হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে।

দলিল অনুযায়ী ফ্ল্যাটের অবস্থান, গুলশান রেসিডেনশিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর প্লটে। এটি ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ-পূর্ব পাশের একটি ফ্ল্যাট। দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দলিল সম্পন্ন হয়।

হেবা দলিলে সই রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের। প্লট মামলার অভিযোগ তদন্তে দুদক ওই আইনজীবীরও সাক্ষ্য নেয়।

দুদককে তিনি বলেছেন, ২০১২ সালে তিনি নোটারি লাইসেন্স পান। শুরু থেকেই তিনি শুধু নিজের চেম্বারের কাগজ নোটারি করেন। তার নোটারির নামে যে হেবা দলিলটি দেখানো হয়েছে, সেখানে সিলটি তার মতই, কিন্তু সইটি ‘তার নয়’।

হেবা দলিলের এক সাক্ষীকে চিনলেও দাতাসহ অন্যদের চেনেননা বলে দুদকের কাছে দাবি করেছেন ওই আইনজীবী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “ওই হেবা দলিলের নোটারি আমি করিনি। উনাদের কখনো ওই নামে চিনিও না। এমনিতে চিনি ওই নামে একজন ব্রিটিশ মন্ত্রী ছিলেন কিছুদিন আগে; ওতটুকুই।

“কিন্তু উনাদের আমি চিনি না। আর বিষয় হল, আমি আমার চেম্বারের বাইরে সাধারণত কোনো নোটারি করি না।''

এই আইনজীবী বলেন, “আমি বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও কোনো নোটারি করি না। যদি কাউকে আমি না চিনি, তাদের ক্ষেত্রেও করি না।”

শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও টিউলিপ সিদ্দিক।

শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও টিউলিপ সিদ্দিক।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে রাজউকের প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সাত সদস্যের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় রাজউক ও সরকারের একাধিক কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়।

সোমবার এসব মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, “শিগগিরই সেগুলো আদালতে দাখিল করা হবে।”

এর মধ্যে একটি অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা নিজে ও সন্তানের নামে প্লট নিচ্ছেন—এ তথ্য জানার পর বোন আজমিনা সিদ্দিকের জন্যও প্লট নিতে উদ্যোগী হন টিউলিপ।

দুদক বলছে, প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নি হওয়ার সুবাদে ‘অবৈধ প্রভাব’ কাজে লাগিয়ে টিউলিপ নিজের জন্য বা অন্য কাউকে ‘সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার’ অপরাধে জড়িত হন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তিনি ‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে’ গুলশানের একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা অর্জন করেন, যা প্লট বরাদ্দ আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী তাকে পূর্বাচল প্রকল্পের প্লট পেতে অযোগ্য করে তোলে।

এ কারণে তিনি ‘জালিয়াতি করে’ ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে ভুয়া নোটারিতে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন। আয়কর নথিতে ২০১৫ সালের পর থেকে এই ফ্ল্যাটের তথ্যও ‘গোপন’ করেন।

দুদক বলছে, আজমিনা সিদ্দিকও পূর্বাচল প্রকল্পের প্লট পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না। তাই তিনি ফ্ল্যাটটির মালিকানা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ না করে বাস্তব দখল নেন, যেন প্লট বরাদ্দের সুযোগ পাওয়া যায়।

প্লট বরাদ্দের অনিয়মের এসব মামলায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ ও সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে।

রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম, মো. কামরুল ইসলাম, নায়েব আলী শরীফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদও আসামির তালিকা আছেন।