Image description
তিন কার্যদিবসে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তির নজির আছে

দেশে বেড়েই চলেছে ধর্ষণের ঘটনা। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিভিন্ন সময়ে আইন সংশোধনসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তাতে মিলছে না আশাতীত সফলতা। ফলে ধর্ষণের প্রতিবাদে রাজপথে নামছে মানুষ। সম্প্রতি কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের শায়েস্তা করতে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি ঘটছে গণপিটুনির ঘটনাও। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ষণ মামলার দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিষ্পত্তিতে আইন সংশোধনে উদ্যোগী হয়েছেন। ২০২০ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করলেও হ্রাস পায়নি ধর্ষণের ঘটনা। সংশোধনের পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ মামলার বিচারে কতজনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নাই। তবে ধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় অনেক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা। কিন্তু বিচারের বাকি দুটি ধাপ পেরোতে লাগছে দীর্ঘ সময়। সেজন্য সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে এ ধরনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।

আইনজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় যদি অভিযুক্তের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে হয়তো এটা নিরোধক হিসেবে কাজে দিতে পারে। অভিযুক্তকে যে শাস্তিই দেওয়া হোক না কেন, সেটা যেন তাড়াতাড়ি কার্যকর করা হয়। দ্রুত শাস্তি কার্যকর করা হলে এর প্রভাব সমাজে পড়তে বাধ্য।

সম্প্রতি মাগুরায় এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবিতে রাজপথে নামে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। রাজপথ থেকে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান ও তা কার্যকরের দাবি জানান।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে অব্যাহতভাবে বেড়েছিল ধর্ষণ, খুনসহ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা। সেই সহিংসতা রোধে ২০২০ সালে আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় সংশোধনী আনে। এতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছাড়াও অভিযুক্ত এবং ভিকটিমের মেডিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি তাদের ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়টি আইনে যুক্ত করা হয়। ভিকটিম ও অভিযুক্তের ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করায় অনেক ক্ষেত্রে আসামি পলাতক থাকায় তদন্ত রিপোর্ট দাখিলে বিলম্ব হচ্ছে পুলিশের। যার প্রভাব পড়ছে বিচারের ওপর।

দ্রুত বিচারের নজিরও রয়েছে

কুষ্টিয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার বিচার তিন কার্যদিবসে শেষ করার নজিরও রয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর দেওয়া এক রায়ে মাদ্রাসা সুপার আব্দুল কাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান। বর্তমানে এই বিচারক ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। ছিলেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারও। ঐ বছরের ৪ অক্টোবর ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় ঐ দিনই গ্রেফতার এবং পরদিন দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ১২ নভেম্বর চার্জ গঠন করা হয়। মাঝে দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ১৫ নভেম্বর ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন, বাদী-বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন ঐ বিচারক। বাগেরহাটের মোংলায় সাত বছর বয়সি এক শিশুকে ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ গঠনের সাত কার্যদিবসের মধ্যে রায় ঘোষণা করে ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর আসামি আব্দুল মান্নান সরকারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলার বিচার শেষ করা হয় ১৩ কার্যদিবসে। ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর ঐ বিচারে আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম কামরুন্নাহার।

এদিকে ধর্ষণের কিছু মামলায় দ্রুত নিষ্পত্তির নজির থাকলেও অধস্তন আদালতে বেশির ভাগ মামলাই বিলম্বে নিষ্পত্তি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধস্তন আদালতের একাধিক বিচারক বলছেন, বেশ কিছু কারণে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে মামলা জট অন্যতম। রয়েছে বিচারক সংকটও। এছাড়া বিলম্বে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল, সাক্ষী গরহাজির ছাড়াও মামলার পক্ষগণের অসহযোগিতা রয়েছে। ফলে একজন বিচারক দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে ইচ্ছুক হলেও এসব কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বিচারাধীন পুরোনো মামলার পাশাপাশি প্রতি মাসেই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। তাতে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়বে। দ্রুত বিচার পাবেন বিচার প্রার্থী জনগণ।