Image description

গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে আপাতত কোনও ধরনের ঋণ পাবেন না পেট্রোবাংলা ও বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) কর্মকর্তারা। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী এই দুটি প্রতিষ্ঠানসহ তাদের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কোম্পানির কর্মকর্তারা গাড়ি কেনার জন্য ঋণ পেতেন। তবে এই ঋণ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি বিভাগের উপসচিব মো. আহসান উদ্দিন মুরাদের সই করা এক আদেশে বলা হয়, ‘পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পেট্রোবাংলা, বিপিসি  এবং  তাদের আওতাধীন সব কোম্পানির কর্মকর্তাদের সব ধরনের গাড়ি কেনার ঋণ ও গাড়িসেবা নগদায়ন যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে স্থগিত করা হলো।’

প্রসঙ্গত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব থেকে তার ওপরের স্তরের কর্মকর্তাদের জন্য সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি কেনার সুবিধা বাতিলের সুপারিশ করে। ওই দিন প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশন এই সুপারিশ জমা দেয়।

কিন্তু সরকারের প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গাড়ি কেনার ঋণ সুবিধা বাতিল হয়েছে— এমন কোনও সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনও তারা কিছুই জানেন না। তবে প্রশাসনিক কমিটির সুপারিশের বিষয়ে তারা শুনেছেন।

তবে অন্য কোনও মন্ত্রণালয় বা তার অধীন কোনও সংস্থায় এই ঋণ সুবিধা বাতিল না হলেও জ্বালানি বিভাগ পেট্রোবাংলা ও বিপিসির কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই সুবিধা বাতিল করলো। এটিকে বৈষম্য হিসেবেও দেখছেন সংস্থা দুটির কর্মকর্তাদের কেউ কেউ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তে বাতিল হলে এটি সবার জন্য একসঙ্গে হওয়ার কথা। কিন্তু কেউ সুপারিশ করলে তা কেবল এককভাবে জ্বালানি বিভাগের কোম্পানিগুলোতে বাস্তবায়ন করা এক ধরনের বৈষম্য বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

তবে হুট করে কেন সরকার গাড়ি কেনার ঋণ দেওয়া বন্ধ করলো, এ বিষয়ে চিঠিতে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যদিও আর্থিক সংকটের কারণে এমনটি করা হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

সরকারি চাকরিতে বেতন স্কেলের ওপর ভিত্তি করে কর্মকর্তারা গাড়ি কেনার জন্য ঋণ পেয়ে আসছেন। একইসঙ্গে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও তারা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন।

জ্বালানি বিভাগের সব কোম্পানির মালিকানা সরকারের হাতে থাকায় একইভাবে কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা এই সুবিধা পেতেন। তবে এই আদেশের পর এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উপসচিব পদে তিন বছর চাকরির পর কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনতে পারেন। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার করে টাকাও পান তারা।

জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা জনপ্রশাসনের সিদ্ধান্ত না। এটা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। মন্ত্রণালয় তার অধীন কোম্পানিগুলোর বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ তবে কেন এই সিদ্ধান্ত, এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানাতে রাজি হননি।

বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সবুর হোসেন বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এ ধরনের একটি সুপারিশ করেছিল শুনেছিলাম। তবে এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়গুলোতে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি।’

প্রায়ই একই কথা বলেছেন যুগ্ম সচিব সানাইল হক। তিনি জানান, গাড়ি কেনার জন্য ঋণ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে, এমন কোনও খবর তিনি জানেন না।