Image description

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাজ করতে যাওয়া নারী শ্রমিকদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। ২০২২ সালের কভিড সংক্রমণের পর থেকে বাংলাদেশের নারীদের বিদেশ যাত্রার হার টানা গত তিন বছরে কমেছে। বিশেষ করে এ সময়ে যে দেশটিকে নারীরা সবচেয়ে বেশি কাজ করতে যান অর্থাৎ সৌদি আরবে যাওয়ার হারও টানা দুই বছরে কমেছে। তবে দুই দশকের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী শ্রমিক (৪০ জন) পাকিস্তানে গিয়েছেন। এ সময়ে হংকং, জাপান, ইতালি ও ব্রুনাইতেও নারী শ্রমিকরা নতুন গন্তব্য হিসেবে যাত্রা করেন। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী এসব তথ্য জানা যায়।

গত বছরের শেষে জনশক্তি রপ্তানি খাতের সঙ্গে জড়িতরা আশঙ্কা করছিলেন, আসছে দিনে বিদেশে বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিকের যাত্রা আরও কমে যেতে পারে। তাদের সেই আশঙ্কা সত্যি হতে যাচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্সির দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব এখন দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে নারী শ্রমিক নিচ্ছে। আবার নারী শ্রমিকদের ওপর হওয়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণেও নারী শ্রমিকরা এখন সৌদিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।

বিদেশে নারী কর্মী কমে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে যে সময়ের মধ্যে গৃহকর্মী চায় বাংলাদেশ থেকে সে সময়ে পাঠানো যাচ্ছে না। আবার দেশের নারী শ্রমিকদের ভাষাগত দক্ষতা বেশি ভালো নয়। তারা ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও নয়। বিগত বছরগুলোতে নারী শ্রমিকদের ওপর নানানরকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে নারী শ্রমিকরাও সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ২০২৪ সালে দেশ থেকে মোট ১০ হাজার ৩৬১ জন নারী বিদেশে যান।

এর আগের বছর ২০২৩-এ যান ৬১ হাজার ১৫৮ জন আর ২০২২-এ যান ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। অর্থাৎ করোনার পর নারী শ্রমিকদের বিদেশ যাত্রার হার কমেছে। এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ১ লাখের ওপর প্রতিবছর নারী শ্রমিকরা বিদেশ যেতেন। ২০২০ এবং ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২১ হাজার ৯৩৪ জন এবং ৮০ হাজার ১৪৩ জন। বিএমইটি-এর তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবে যথাক্রমে ৪ হাজার ৬৩৯ এবং ৩ হাজার ৩৪১ জন নারী শ্রমিক যান। এর আগে ২০২২ সালে সৌদিতে যান ৭০ হাজার ২৭৯ জন নারী শ্রমিক। এর পরের বছর যান ৫০ হাজার ২৫৪ জন আর ২০২৪ সালে যান ৪০ হাজার ৩১৫ জন নারী শ্রমিক। এ সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতেও নারী শ্রমিকের যাত্রা কমেছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান ২ হাজার নারী। এর পরের বছর যান ১ হাজার ৩৬ জন। কুয়েতে ২০২৩ সালে যান ১ হাজার ১৭৫ জন আর ২০২৪ সালে যান ৪১৩ জন। ওমানে ২০২৩ সালে যান ৬ হাজার ৫৪৭ জন আর ২০২৪ সালে যান ৫৬ জন। তবে কাতারে ২০২৩ সালে ১ হাজার ৯৫ জন নারী যান আর ২০২৪ সালে যান ২ হাজার ৩৩১ জন। জর্ডানেও নারী শ্রমিকের যাওয়ার হার কিছুটা বেড়েছে। যুক্তরাজ্যেও ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন ১ হাজার ৪৮৩ জন আর ২০২৩ সালে ৫ হাজার ২৫৬ জন। তবে নতুন গন্তব্যের মধ্যে ইতালিতে গত বছর গিয়েছিলেন মাত্র ১২ জন। চলতি বছরের দুই মাসেই গিয়েছেন ৬০ জন। একইভাবে হংকং ও জাপানেও চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে নারী শ্রমিকের গমন ইতিবাচক। ২০০৪ সাল থেকে ২০২৪ সালে ২০ বছরের মধ্যে চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী পাকিস্তান গিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছর নারীরা দেশটিতে কাজের জন্য যাননি।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)- এর সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হংকংয়ের সঙ্গে আমাদের এমইউ স্বাক্ষর আছে। সংখ্যায় কম হলেও যে নারী শ্রমিকরা হংকং যাচ্ছেন তারা শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত। গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের জন্য এক সময় বড় বাজার ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর সৌদি আরব সবসময় নারী শ্রমিকদের জন্য বড় বাজার ছিল। তবে সৌদিতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু কারণ আছে। আমরা আশঙ্কা করছি, সৌদি আরবে আসছে দিনে বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিকের যাওয়ার হার আরও কমে আসবে। অর্ডার পাওয়ার পর রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর প্রশিক্ষণ দিয়ে সৌদি পাঠাতে তিন মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। কিন্তু এখন সৌদি আরব আরও কম সময়ে কর্মী পেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে নারী শ্রমিক নিচ্ছে।