
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ৭৯ নম্বর অর্থোপেডিক ওয়ার্ড। ওয়ার্ডের প্রতিটি শয্যা রোগীতে পূর্ণ। ফ্লোরেও আছেন কিছু রোগী। এ ওয়ার্ডের ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা রকম চিকিৎসা ও সাধারণ বর্জ্য। আর এক কোণায় স্তূপ করা আছে আরও কিছু জীবাণু বহনকারী বর্জ্য। তা ছাড়া ওয়ার্ডের বাথরুম থেকে দূষিত পানি বের হয়ে সয়লাব ওয়ার্ডের একপাশ। এ পথে যাতায়াতের সময় অনেক রোগী নাক চেপে রাখেন।
কেবল এই ওয়ার্ড নয়, অনেক ওয়ার্ডেরই এমন অবস্থা। ফলে রোগীদের বাথরুম তো বটেই, ওয়ার্ডেও নাক চেপে ধরতে হয়। ওয়ার্ডের ভর্তি রোগী তানভীর আহমেদ বলেন, রোগীর ব্যবহৃত চিকিৎসা বর্জ্য এখানে ফেলে রাখা হয়। পরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী এসে ঝাড়ু দিলেও তা এক কোণায় রাখা হয়। সেখান থেকেই বর্জ্যরে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তা ছাড়া ওয়ার্ডের ফ্লোরের বর্জ্যগুলো অনেক সময় ধরে থেকে যায়। অবস্থা এমন ‘ওয়ার্ডের শয্যায় রোগী, ফ্লোরে বর্জ্য’। পরিবেশের কারণে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগী উল্টো আরও অসুস্থ হয়ে যায়। জানা যায়, স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্যরে মধ্যে আছে- রোগীর ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, টিউমার, ওষুধের শিশি, রক্তের ব্যাগ, স্যালাইনের ব্যাগ, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদিসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর সামগ্রী। দেশের চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বর্জ্যকে ১১ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। বর্জ্যরে ধরন অনুযায়ী তা শুরু থেকেই পৃথকভাবে সংরক্ষণ ও অপসারণ করার কথা। জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, হাসপাতালে রোগীরা যান চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার জন্য। এখন ওয়ার্ডের ভিতরেই যদি বর্জ্য থাকে, তাহলে সেটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, অপ্রত্যাশিত এবং মারাত্মক অন্যায়। কারণ এসব চিকিৎসা বর্জ্য থেকে জীবাণু ছড়াবে। তাতে রোগী আরও অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অপারেশন রোগী বা মারাত্মক কোনো রোগে আক্রান্ত রোগী হলে ইনফেকশন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ দায় কোনো মতেই এড়াতে পারে না। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তাসলিম উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের নির্দিষ্ট পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে থাকে। এরপরও অনেক ওয়ার্ডে বর্জ্য থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ওয়ার্ডের ভিতরে বর্জ্য থাকাটা কাম্য নয়। বিষয়টা আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করব।