
দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এখানে রোগীরা স্বল্প খরচে রেডিওথেরাপি নিতে পারেন। প্রায় ৩ মাস ধরে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত এ হাসপাতালটিতে বন্ধ রয়েছে ক্যান্সার চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ-রেডিওথেরাপি। দীর্ঘ সময় পরও বলা যাচ্ছে না কবে নাগাদ চালু হতে পারে ক্যান্সার চিকিৎসার এই সেবাটি। গতকাল সরজমিন ঘুরে হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের রেডিওথেরাপি কক্ষের এমন চিত্র দেখা গেছে।
রেডিওথেরাপি কক্ষের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, এখানে কোনো মেশিন এখনো চালু হয়নি। পুরাতন মেশিন ঠিক করার কাজ চলছে। দুইটা মেশিন নতুন বসানো হয়েছে। তার মধ্যে একটি চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। আরেকটিতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন হাসপাতালটির একটা মেশিনে লিকেজ পেয়েছে। আর পরমাণু শক্তি কমিশন অনুমতি না দিলে কোনো উপায় নেই মেশিন চালু করার।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওথেরাপি দেয়ার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, থেরাপি কক্ষের সামনে লেখা, ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে liniac-3 & liniac-4 মেশিনে রেডিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। মেশিন মেরামত হয়ে গেলে আমরা কার্ডে দেয়া নম্বরে ফোন করে জানিয়ে দেবো’-সংবলিত নোটিশ এখনো রয়েছে। পুরাতন যন্ত্রগুলোর একটির মেরামতের কাজ চলছে। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে রাখা হয়েছে কক্ষে। প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন হাসপাতালটিতে। তাদের একটি অংশ সংশ্লিষ্ট বিভাগটিতে আসলেও এখন আর রোগীদের ভিড় নেই কক্ষের সামনে। কিছুসংখ্যক রোগী আছেন যারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নেওয়াজ শরীফ পঞ্চগড় থেকে আত্মীয়কে নিয়ে রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগে রেডিওথেরাপি নিতে এসেছেন। কথা হয় তার সঙ্গে। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তার দেখিয়েছেন রোগীকে। কিন্তু সেখানে রেডিওথেরাপি সেবা পাননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, হাসপাতালের সব মেশিন নষ্ট। উপায় না পেয়ে তারা আসেন ক্যান্সার হাসপাতালে। কিন্তু এখানে এসেও জানতে পারেন এখানকার সব মেশিন অকেজো। তিনি বলেন, বিএসএমএমইউতে দুইজন ডাক্তার আমাকে জানালেন ওখানে রেডিওথেরাপি হয় না। পরে তারা নিজেদের ভিজিটিং কার্ডসহ দুইটা ক্লিনিকের সন্ধ্যান দিয়ে বললেন ক্লিনিকগুলোতে কম দামে রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। পরে আমি জানতে পারি ক্যান্সার হাসপাতালের মেশিনগুলো নাকি এ মাসের ৪ তারিখে ঠিক হয়ে গেছে। তাই এখানে এলাম। কিন্তু রেডিওথেরাপি কক্ষে কর্তৃপক্ষ জানালো এখনো ঠিক হয়নি। ঠিক হলে জানিয়ে দেয়া হবে।
তিন-চার মাস আগেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, হাসপাতালে রেডিওথেরাপির সব মিলিয়ে পাঁচটি মেশিন ছিল, দুইটি মেশিন দিয়ে রেডিয়েশন থেরাপির কাজ করা হয়ে থাকে। দুইটি মেশিনের একটি মাঝে মাঝে নষ্ট হয়ে যায়। আবার চালু হয়। এভাবেই চলছিল রেডিয়েশন থেরাপির কাজ। এর অল্প কয়দিন পরেই খোঁজ পাওয়া যায় ঝিমিয়ে চলা মেশিন দু’টিও চূড়ান্তভাবে অকেজো হয়ে গেছে। তাই প্রায় ৩ মাস ধরে বন্ধ আছে ক্যান্সার চিকিৎসার এই অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়াটি। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ক্যান্সারের চিকিৎসার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যায় হলো রেডিয়েশন থেরাপি। বাকি দু’টি পর্যায় হলো সার্জারি এবং কেমোথেরাপি।