
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করতে চায় ঐকমত্য কমিশন। এ নিয়ে ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ১৩ই মার্চের মধ্যে এ বিষয়ে দলগুলো তাদের অবস্থান জানাতে হবে। গতকাল জাতীয় সংসদের এলডি হল মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দলগুলোর কাছ থেকে তাদের মতামত প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করবো।
এজন্য এখনো পর্যন্ত আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ করিনি। যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সেই সময় থেকেই আলোচনা শুরু হবে। আমরা চাই- দ্রুত আলোচনা করতে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে। আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের যাত্রার দিন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সৌজন্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ৩৪টি দলের মোট ১০৪ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। সভায় অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৩৪টি দলের কাছে ছয়টি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের অনুলিপি ২২শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পৌঁছে দেয়া হয়। ইতিপূর্বে সব দলকে প্রতিবেদনগুলোর সফট কপিও পাঠানো হয়। এরপরে ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা তিন দফা বৈঠক করে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ চিহ্নিত করেন। পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহকে ছক আকারে বিন্যস্ত করা হয়। এসব ছকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোকে যুক্ত করা হয়নি। পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে যে, তাদের সুপারিশসমূহ প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব। আলী রীয়াজ জানান, মোট ১৬৬টি সুপারিশ চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত সুপারিশ ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রয়েছে। প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো-সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কিনা। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে।
সেগুলো হলো- ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। এ তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায়। এক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প আছে। সেগুলো হলো- ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোকে ‘মন্তব্য’ দেয়ার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আশা করছি যে, আগামী ১৩ই মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলো তাদের মতামত আমাদেরকে জানাবেন। ইতিমধ্যে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা ব্যাখ্যার দরকার হয়, তবে কমিশন সেসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া এবং এসব বিষয়ে আলোচনা করতে সবসময় প্রস্তুত আছে। গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশমালার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নাগরিকদের মতামত জানতে চাওয়া হবে। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মতামত চাওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অধ্যাদেশের মাধ্যমেও সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব, অতীতে বাংলাদেশে এটা হয়েছে। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।