
দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম প্রিয় আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান মেঘের রাজ্য খ্যাত সাজেক ভ্যালি এখন বিবর্ণ দগ্ধভূমি। আগুনের আগ্রাসী ছোবলে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এ পযর্টন কেন্দ্রটি। শুধু রিসোর্ট, কটেজ, রেস্তোরাঁ নয় পাহাড়ের কোলে বসবাসকারী ত্রিপুরা ও লুসাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বাসিন্দাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই বসতঘরগুলোও ভস্মিভূত হয়েছে। সাজেকের মেঘ আর বাতাস এখন ভারী হয়ে উঠেছে সর্বস্ব হারানো প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং অসহায় বাসিন্দাদের কান্না ও দীর্ঘশ্বাসে।
গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় লাগা সর্বগ্রাসী আগুনে মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টায় বিরাণভূমিতে পরিণত হয় সাজানো-গোছানো স্বপ্নীল সাজেক ভ্যালি। ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসেব কষা এখনো শেষ না হলেও প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে আনুমানিক অর্ধশত কোটি টাকা। অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। সাজেক ভ্রমণে প্রথমে নিষেধাজ্ঞা দিলেও গতকাল তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, কটেজ, দোকানপাট এবং স্থানীয়দের বসতঘর মিলিয়ে ১৪০টি স্থাপনা সমপূর্ণ ভস্মিভূত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাজেক ইকো রিসোর্টের দ্বিতীয়তলা থেকে প্রথমে আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছে। চোখের পলকেই দাও দাও করে আগুন জ্বলে উঠে এবং দ্রুত তা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। সাজেকের অধিকাংশ রিসোর্ট কাঠ ও বাঁশের তৈরি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
শতরঞ্জি রিসোর্টের মালিক নাইমুল ইসলাম জানান, এই মাসের ৩০ তারিখ রিসোর্ট উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগুনে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে তার।
মেঘের ঘর রিসোর্টের মালিক জয়নাল আবেদীন বলেন, জীবনের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। আমার দুটি রিসোর্ট ও একটি রেস্টুরেন্ট পুড়ে গেছে। আমরা একবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি।
স্থানীয় এক উদ্ধারকর্মী অভিলাষ ত্রিপুরা বলেন, আগুন লাগার সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস পৌঁছলেও ততক্ষণে প্রায় সবকিছু পুড়ে যায়। তিনি বলেন, পর্যটন কেন্দ্র হতে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছতে আড়াই-তিন ঘণ্টা লাগে। তিনি জানান, সাজেক দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু সাজেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নেই।
খাগড়াছড়ির ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুত্সুদ্দি বলছেন, প্রত্যেকটা দোকান-রিসোর্ট-ঘরবাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম থাকে। এখানে এমন ছিল না। এ কারণে
শুরুতে আগুন নির্বাপণ করা যায়নি। আগুনে ৩৫টি বসতবাড়ি পুড়ে যাওয়ায় চরম সংকটে স্থানীয় লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ২০০ মানুষ। ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ায় সাজেকের রুইলুই পাড়ার একটি স্টোন গার্ডেনে সোমবার রাত কাটিয়েছেন তারা। ভবিষ্যত্ নিয়ে দুশ্চিন্তায় শেষ সম্বল হারানো মানুষগুলো। তবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের জরুরি খাবার ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাজেকের রিসোর্ট মালিকরা।
আগুন কীভাবে লেগেছে সে ব্যাপারে এখনো পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। বিষয়টি তদন্তে রাঙ্গামাটি স্থানীয় সরকারের উপপরিচালককে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন। সোমবার রাতে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর সাজেকে পর্যটক যাওয়া-আসায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। তবে গতকাল জেলা প্রশাসনের এক সভায় সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পাঠান মো. সাইদুজ্জামান।