
দেশের দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তৈরি করেছিল উল্লেখ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, এর লিখিত রূপ হিসেবে জাতীয় সনদের কথা বলা হচ্ছে। সেটা হচ্ছে সামাজিক চুক্তি। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সঙ্গে চুক্তি করবে। ফলে নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত হবে, অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে, রাষ্ট্র জবাবদিহির মধ্যে যাবে। এ জায়গা তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত নেই বলে মনে করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশের স্বপ্ন ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ। আহমদ পাবলিশিং হাউসের প্রকাশক মেছবাহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, বইয়ের লেখক ডা. ওয়াজেদ খান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজকে আমাদের ঐক্যের যে জায়গা দরকার, এমন একটা রাষ্ট্র গড়া দরকার, যেটা জবাবদিহিমূলক হবে। যেটা কোনো অবস্থাতে স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠবে না। এমন ব্যবস্থা করবে, যেন নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। এ জায়গায় ঐক্য রয়েছে। ফলে রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও এ ঐক্য ধরে রাখা দরকার।’
রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের কারণ রাজনৈতিক আদর্শ উল্লেখ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সমাজ হলে তো দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকবেই। গণতান্ত্রিক সমাজ চাইব, আর ভাবব আপনি-আমি সব বিষয়ে একমত হব, তাহলে তো উত্তর কোরিয়ায় বাস করতে হবে। কিন্তু আমরা তো উত্তর কোরিয়া চাই না। সে রকম চেষ্টার বিরুদ্ধে ১৬ বছর ধরে লড়াই-সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। সেখানে মতপার্থক্য ও ভিন্নমত থাকলেও সহিষ্ণুতা থাকবে।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘মতপার্থক্যকে শত্রুভাবাপন্ন না করে তুলি। প্রয়োজন নেই। আমরা একত্রে পারি, সেটা প্রমাণ করেছেন।’
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘কোর জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। সেই সনদ তৈরি করতে হবে, যা সামাজিক চুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। যা দিকনির্দেশনা দেবে, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কেমন হবে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের সনদ, নাগরিকদের স্বপ্ন। তারা নিরাপত্তা চায়। যারা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তাদের না জানিয়ে সরকার যেন যা ইচ্ছা তা করতে না পারে।’
সংবিধান সংস্কার কমিশনের জননাগরিকতন্ত্রের সুপারিশের সমালোচনার বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রচলিত শব্দ হচ্ছে প্রজাতন্ত্র। সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বলেছি, প্রজাতন্ত্র বাদ দিয়ে নাগরিকতন্ত্র করি। অনেকের আপত্তি রয়েছে, থাকতেই পারে। প্রজা না হওয়া ভালো। প্রজা হলে প্রভুর একটা সামন্ততান্ত্রিকতা তৈরি হয়।’
গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের জনগণ নানা স্বপ্ন দেখলেও তা ডাকাতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তিনি বলেন, ‘স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখা গেলেও বাস্তবতায় ছুঁতে পারিনি।’
মনির হায়দার বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন নতুন একটা পর্বে এসে পৌঁছেছে। এবার আমরা যে স্বপ্নের কাছাকাছি এসেছি, বাস্তবায়ন করতে না পারলে ভবিষ্যতে বহুকালের জন্য স্বপ্ন দেখার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। স্বপ্ন দেখার মতো কোনো চোখ এ রাষ্ট্রের থাকবে না। তাই এবার স্বপ্নকে ডাকাতি হতে দেওয়া যাবে না। এখানে জাতির শক্ত অবস্থান দরকার।’