Image description
ছিনতাইয়ে প্রকাশ্যে গুলি

অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক সুফিয়া কামাল (৬৫) রাজধানীর আফতাবনগরে থাকেন। রোববার রাতে বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে (৫৫) গুলি করে ২০০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার খবর শুনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত এই নারী অতীতেও সংঘাতের খবর শুনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তার রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

তার মেয়ে নাসিমা আক্তার বলেন, ‘রাজধানীতে ছিনতাই ও অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে। মা এমনিতেই অসুস্থ, এসব খবর শুনে তিনি আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কখন যেন সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা করে, এই ভয় সবসময় তাড়া করে বেড়াচ্ছে।’

ছিনতাই আতঙ্কে বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রা: একই রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, রিকশা থামিয়ে দুই তরুণ ছিনতাই করছে। এক নারী রিকশায় বসে আছেন, পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আরেক নারীকে ছিনতাইকারী চাপাতি হাতে ভয় দেখাচ্ছে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত শেখেরটেকের বাসিন্দা ইশরাত বলেন, ‘বাসার কাছেই সন্ধ্যার পর টিউশন করাতাম। ছিনতাইয়ের ভয়ে সেই টিউশন ছেড়ে দিয়েছি। পুরো রাজধানীতেই ছিনতাই বেড়েছে। মোহাম্মদপুর তো আরও বেশি অপরাধপ্রবণ এলাকা। বাইরে বের হলে সবসময় আতঙ্কে থাকি।’

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা: জনস্বাস্থ্য ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে মানুষের মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হন এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভীতিকর ঘটনা প্রত্যক্ষ করলে মানুষের মনে আতঙ্ক জন্ম নেয়। দীর্ঘদিন এই ভীতি থাকলে বিষণ্নতা ও মানসিক চাপ বাড়তে পারে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে। সেইসঙ্গে নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করতে হবে। সুস্থ বিনোদন, ধর্মচর্চা, খেলাধুলায় মনোযোগী হওয়া এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করাও জরুরি।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘ছিনতাই ও অপরাধ বৃদ্ধির ফলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্তদের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সরকারকে এই সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কিশোর গ্যাং ও তরুণদের অপরাধে জড়ানোর পেছনে সার্বজনীন ও কর্মমুখী শিক্ষার অভাব রয়েছে। পড়াশোনার সুযোগ না থাকায় এবং আয়ের উৎস না থাকায় তরুণরা অপরাধে জড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মসংস্থানমুখী সংস্কার আনতে হবে।’

ছিনতাই ও অপরাধ বৃদ্ধির ফলে শহরবাসীর মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বাড়ছে। নারী ও শিশুরা মানসিক চাপে ভুগছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি সচেতনতা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থান ব্যবস্থা উন্নত না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।