Image description

দেশজুড়ে চলমান যৌথ বাহিনীর অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে ১৫ দিনে ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আট হাজারের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। তাদের কাছ থেকেও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এই অভিযান চলছে।

সূত্র জানায়, সন্ত্রাসীদের অনেকের কাছে অস্ত্র রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া অস্ত্র।কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের মধ্যে এখনো ১২ জন গ্রেপ্তারের বাইরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যৌথ বাহিনীর অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১১টি ম্যাগাজিন, ৬৮ রাউন্ড গুলি, ২৪টি কার্তুজ এবং কিরিচ, ছুরি, তলোয়ার, রামদা, রড, কুড়াল, লাঠিএ ধরনের ১৫০টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের তথ্যমতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গত ৫ ও ৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন থানা ও কারগারে হামলা চালিয়ে পিস্তল, রিভলবার, শটগানসহ  ১১ ধরনের  পাঁচ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে চার হাজার ৩৬৬টি অস্ত্র গতকাল পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। এক হাজার ৩৮৪টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।

উদ্ধার না হওয়া অস্ত্র ডাকাত-ছিনতাইকারীদের হাতে চলে গেছে বলে সূত্রের দাবি। এসব অস্ত্র দিয়ে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনার তথ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র তো ভালো মানুষ রাখে না। যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে, অপরাধীরা সংগ্রহ করবে, এটাই স্বাভাবিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে গত ১৫ বছরে ১০ হাজার ৮৪৫টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এসব লাইসেন্স স্থগিত করে অস্ত্র জমা চেয়েছিল সরকার। গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর শেষ দিন পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের ৬৪ জেলার থানাগুলোতে ৯ হাজার ১৯১টি অস্ত্র জমা পড়ে। কিন্তু সরকারের ডাকে বৈধ লাইসেন্সধারীদের এক হাজার ৬৫৪টি অস্ত্র জমা পড়েনি। ফলে এই অস্ত্রগুলো এখন অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অস্ত্র যাঁরা জমা দেননি, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অপারেশন ডেভিল হান্টে উদ্ধার হওয়া ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে কয়েকটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর কাছ থেকে উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া ইনামুল হক সাগর গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্টে অস্ত্র উদ্ধার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশ কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করা গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে যে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, এর মধ্যে যাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী অস্ত্র জমা দেননি, তাঁদের অস্ত্রও থাকার কথা। এগুলো আমরা খতিয়ে দেখে নিশ্চিত করে বলতে পারব।

লুটের অস্ত্র অপরাধীদের হাতে : কক্সবাজারের মহেশখালী এলাকার ডাকাত জিয়াউর রহমান পাঁচ বছর আগে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এই ডাকাত সর্দারের বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যা মামলাসহ অন্তত ১৪টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা থেকে রেহাই পেতে তিনি নিজেকে ভালো মানুষ সাজানোর জন্য অস্ত্র জমা দেন। সঙ্গে তাঁর বাহিনীর সদস্যরাও অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন। লোক দেখানো ভালো সেজে যাওয়া সেই ডাকাত সর্দার জিয়াউর আবারও অস্ত্র সংগ্রহ করেন। এবার তাঁর হাতে উঠে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র। আর ওই খবর জানতে পেরে কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক ও অস্ত্র উদ্ধার করে।

গত ১৪ নভেম্বর আটক জিয়াউরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র সংগ্রহ করে ফের ডাকাতিতে নামেন। তাঁর বাহিনীর হাতেও উঠেছে লুটের এসব অস্ত্র।

গত ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের ডবলমুরিং এলাকায় ডাকাতদের একটি গোপন আস্তানা থেকে লুট হওয়া বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে পুলিশ। লুট হওয়া অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে গত ১৫ আগস্ট ফেনীতে ধরা পড়েছেন রুবেল (২৯) নামের এক যুবক।  থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র যে অপরাধীদের হাতে চলে গেছে, এসব ঘটনা এরই প্রমাণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সর্বশেষ গত রবিবার রাতে রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় আনোয়ার হোসেন নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে তাঁর কাছে থাকা ২০০ ভরি সোনা এবং নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের ধারণা, এখানেও লুটের অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।