
যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ আওতায় আটক করা হয় আওয়ামী লীগ নেত্রীর ছেলেকে। তার বিরুদ্ধে ছিল হত্যাচেষ্টার মামলাও। থানায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় তাকে। অবশেষে মুচলেকা নিয়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশের দাবি, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সুপারিশেই তাকে ছাড়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে ওই আওয়ামী লীগ নেত্রীর ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটি পটুয়ালীর বাউফলের।
ডেভিল হান্টের আওতায় আটককৃত ওই ব্যক্তির নাম শাকিল হাওলাদার। তার মা বাউফলের কালাইয়া ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। শাকিলের বিরুদ্ধে হামলা, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্টের আগে শাকিল ও তার মায়ের দাপটে অতিষ্ট ছিল এলাকাবাসী। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মা খানিকটা চুপসে গেলেও বিএনপির স্থানীয় কতিপয় নেতার সঙ্গে মিলেমিশে দাপট অব্যাহত রেখেছে শাকিল। সপ্তাহখানেক আগে প্রতিবেশী রিপনের জমির বীজ ধান খেয়ে ফেলে শাকিলের গরু। এর বিচার চাইতে গেলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে রিপনকে ধাওয়া করে আওয়ামী লীগ নেত্রীর ছেলে। জীবন বাঁচাতে রিপন পার্শ্ববর্তী মনির হাওলাদারের বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়ে হামলা করে শাকিল। কুপিয়ে বাড়ি ভাঙচুর ও ঘরে থাকা লোকজনকে মারধর করা হয়।
মনির হাওলাদারের স্ত্রী যুগান্তরকে বলেন, ‘হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের পর আমার স্বামী অভিযোগ দিতে বেশ কয়েকবার থানায় গেলেও তা নেয়নি বাউফল পুলিশ। পরে স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে দিয়ে বলানোর পর মঙ্গলবার রাতে লিখিত অভিযোগ নেয় তারা। আমাদেরকে বলা হয়, এতেই নাকি মামলা হয়ে গেছে।’
থানা পুলিশের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বুধবার ভোর রাতে বাড়ি থেকে আটক করা হয় শাকিলকে। কিন্তু থানায় নেওয়ার ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর তাকে আবার ছেড়ে দেয় পুলিশ। ওসি কামাল হোসেনের নির্দেশেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে শাকিলকে ছেড়ে দেন ওসি কামাল হোসেন। একইসঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতার সুপারিশ। যাদের মধ্যে অন্যতম বাউফল পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান হাওলাদার। তিনি নিজে লোকজন নিয়ে থানায় গিয়ে শাকিলকে ছেড়ে দেওয়ার তদবির করেন ওসি কামাল হোসেনের কাছে। এছাড়া লেনদেনের বিষয়টি জায়েজ করতে মনির হাওলাদারের দেওয়া অভিযোগটিও মামলা হিসেবে রেকর্ড করেননি ওসি কামাল হোসেন।
শাকিলকে ছেড়ে দেওয়ার তদবির করার বিষয়টি স্বীকার করে শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ‘কালাইয়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন বাদল ও এমদাদ হোসেনের অনুরোধে তাদেরকে নিয়ে থানায় গিয়েছি। যুবলীগ নেতা সন্দেহে শাকিলকে আটক করা হলেও সে রাজনীতি করত না। একজন নিরপরাধ মানুষ যাতে শাস্তি না পায় সেজন্যে থানায় গিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর ছেলে, এলাকায় যার পরিচিতি সন্ত্রাসী মাদক কারবারি হিসেবে তাকে ছাড়াতে থানায় যাওয়ার আগে খোঁজখবর নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থানীয় এ নেতা বলেন, ‘যুবলীগ হিসেবে আটক করা হলেও সে যুবলীগ করে না বলেই থানায় গিয়েছি। তাছাড়া মা বা পরিবার আওয়ামী লীগ বলে সে কেন আটক হবে?’
অভিযোগ বিষয়ে ওসি কামাল হোসেন বলেন, ‘তার (শাকিল) বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছিল না। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি নেতারাও তাকে ভালো বলে সুপারিশ করেছে। তাকে অপারেশান ডেভিল হান্টের আওতায় আমরা থানায় এনেছিলাম। মামলা না থাকায় পরিবারের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে কোন অর্থের লেনদেন হয়নি।’
শাকিলের বিরুদ্ধে মনির হাওলাদারের দেওয়া অভিযোগ এবং তা মামলা হিসেবে রেকর্ড না করা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারী একবারও বলেনি যে সেটা মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে হবে। এছাড়া থানায় আসা ওই এলাকার সাবেক মেম্বারসহ বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে মীমাংসা করা হবে। এরকম অনেক অভিযোগই আমাদের কাছে আসে মীমাংসার আশায়। অভিযোগকারী সরাসরি না বললে আমরা মামলা হিসেবে রেকর্ড করি না।’
থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া মনির হাওলাদার বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর থানা থেকে বলা হয় যে মামলা হয়ে গেছে। এরপর শাকিল হাওলাদারকে গ্রেফতারও করা হল। পরে শুনি যে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি।’