Image description

আড়াই মাস আগেই শুরু হয়েছে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল অঞ্চল কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ। এর মধ্যে চাষিরা ৫.৭৪ শতাংশ লবণ উৎপাদন করেছেন। উৎপাদিত এসব লবণ নিয়ে দুচিন্তায় দিন পার করছেন তাঁরা। বর্তমানে চাষিরা প্রতি কেজি কাঁচা লবণ বিক্রি করছেন ৬.২৫ পয়সা।

অথচ মাঝারি মানের এক কেজি চাল কিনতে একজন চাষিকে খরচ করতে হয় ৬৫ টাকা। ওই টাকা জোগাড় করতে চাষিকে ১০ কেজির বেশি কাঁচা লবণ বিক্রি করতে হচ্ছে।লবণ উৎপাদনে খরচের বিষয় নিয়ে কক্সবাজারের একাধিক লবণ চাষির সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের হিসাবে একজন চাষির বর্তমানে লোকসান এক লাখ ২৫ হাজার টাকা।

একজন চাষি ১.২০ একর (৩ কানি) জমিতে লবণ চাষ করতে পারেন। এক কানি জমি লিজ নিতে খরচ পড়ে ৭০ হাজার টাকা। তিন কানিতে খরচ দুই লাখ ১০ হাজার টাকা। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করলে পলিথিনে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খরচ ২০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তিন কানি জমিতে লবণ উৎপাদন করতে একজন চাষির সর্বনিম্ন খরচ হয় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এক কানি জমিতে লবণ উৎপাদন হয় গড়ে ৩০০ মণ বা ১২ হাজার কেজি। তিন কানিতে ৯০০ মণ বা ৩৬ হাজার কেজি। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম প্রতিমণ (৪০ কেজি) ২৫০ টাকা।

প্রতিকেজির দাম পড়ছে ৬.২৫ পয়সা। ৩৬ হাজার কেজি হিসেবে দাম পড়ে দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা। চাষির উৎপাদন খরচ আড়াই লাখ টাকা। তিন কানিতে একজন চাষির লোকসান ২৫ হাজার টাকা। লবণের মৌসুম থাকে পাঁচ মাস। এ সময় চাষির শ্রমের মূল্য এক লাখ টাকা হিসেব ধরলে মোট লোকসান এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। অথচ গত দুই মৌসুমে লবণের দাম ছিল প্রতিমণ ৫০০-৬০০ টাকা। প্রতিকেজি ছিল ১২.৫ থেকে ১৫ টাকা। এখন সেটা অর্ধেকেই নেমেছে।

কক্সবাজার লবণ চাষি সমিতির সভাপতি মকসুদ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিমণ এখন ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে লবণ। এর মধ্যে ৫০ টাকা শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ চলে যায়। চাষিরা প্রতিমণে পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা। কেজি হিসেবে ছয় টাকার সামান্য বেশি। একজন চাষিকে মাঝারি মানের এক কেজি চাল কিনতে খরচ করতে হয় ৬৫ টাকা। ১০ কেজি লবণ বিক্রি করে এক কেজি চাল পাচ্ছেন না চাষিরা।

বিসিকের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। এর মধ্যে গৃহস্থালি তথা ভোজ্যলবণের বার্ষিক চাহিদা ১০ লাখ টনের মতো। শিল্প কারখানায় লবণের বার্ষিক চাহিদাও ১০ লাখ টনের কাছাকাছি। দেশের চাহিদার তুলনায় বেশি লবণ উৎপাদিত হলেও বিভিন্ন সময় সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানির অনুমোদন দেয়। গত বছর (২০২৪) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের লবণ চাষি আবু তাহের বলেন, এখানের চাষিরা মধ্যস্বত্বভোগীদর কবলে পড়েছেন। লাভের অংশ বেশি পাচ্ছেন দালালরা। তাদের বাইরে গিয়ে লবণ বিক্রির সুযোগ নেই।

কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাজারে প্যাকেটজাত লবণের দামের সঙ্গে মাঠের লবণের দাম ৮৭ শতাংশ বেশি। বিষয়টি নিয়ে কোনো সংস্থা অনুসন্ধান করে না। ফলে দিন শেষে চাষিরাই পথে বসছেন।

চট্টগ্রামের পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন কল-কারখানায় ব্যবহার হওয়া সোডিয়াম সালফেট আমদানির অনুমতি নিয়ে অনেকেই খাবার লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) আমদানি করছেন। আর আমদানি করা এসব লবণ মাঠে উৎপাদিত লবণের থেকে উত্তম হওয়ায় অনেক কম্পানি চাষিদের লবণ কিনছেন না।