![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/9ee52505183dde7e0ded09313d2f42a4.jpg)
গাজীপুরের সাবেক পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম টাকা ছাড়া কিছু চিনতেন না। গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি ব্যবসায়ীদের জন্যও আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছিলেন। বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালান ও লাগেজ কাটা পার্টিকেও শেল্টার দিতেন এমন অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ঘুষ নেওয়ার অপরাধে মোল্যা নজরুলকে ওএসডিও করা হয়েছিল।
তিনি ছিলেন সাবেক বিতর্কিত আইজিপি বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ। বেনজীর আহমেদ তাঁকে নানা অপকর্ম করার সুযোগ করে দিতেন। ক্রসফায়ার ও গুমের সঙ্গেও জড়িত ছিল তাঁর হাত। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও তাঁর বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ আছে। নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন নজরুল।
সেই মোল্যা নজরুলকে এবার গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গত শনিবার রাজশাহী জেলা পুলিশের সহায়তায় সারদার পুলিশ একাডেমি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজের ছাত্র ফাহিম হোসেন হত্যাচেষ্টা মামলায় তাঁকে গত রবিবার গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তুলে সাত দিন রিমান্ড চায় পুলিশ। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মো. ছানাউল্লাহ পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নড়াইল জেলার ছেলে মোল্যা নজরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে ২০০১ সালে ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর এক সহপাঠী কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁকে এসএম হলের ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবে চিনত সবাই। পুলিশে যোগ দেওয়ার পর তিনি টাকা কামানোর দিকে নজর দেন। গত ১৫ বছরে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টিং পেয়েছেন।
ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর ২০২২ সালের মাঝামাঝি গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মোল্যা নজরুলকে সিআইডিতে বদলি করা হয়েছিল। পরে তাঁকে রাজশাহী সারদা পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত করা হয়। তখন থেকে সেখানে ছিলেন তিনি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কমিশনার হওয়ার পর তিনি গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলতে শুরু করেন তিনি। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে থাকতেন তাঁর ভয়ে।
গত ৮ জানুয়ারি দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মোল্যা নজরুলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন সৈয়দ রিয়াজুল করিম নামের এক গার্মেন্ট মালিক। তাঁকে কিভাবে ব্যাবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, তা তুলে ধরেন তিনি। তিনি দাবি করেন, তাঁর কাছ থেকে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মোল্যা নজরুল। রিয়াজুল করিম সাংবাদিকদের জানান, গাজীপুরে তাঁদের নিট সিটি লিমিটেড নামে ফ্যাক্টরি রয়েছে। ফ্যাক্টরির ভবন মালিকের সঙ্গে ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মামলা হয়। তখনকার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুলের নির্দেশে যুগ্ম কমিশনার দেলোয়ার হোসেন ভবন মালিকদের দিয়ে চালু ফ্যাক্টরি তালাবদ্ধ করে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। শাহ নেওয়াজ নামের এক লোকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দেওয়ার পর ফ্যাক্টরি না খুলে পুনরায় তাদের সঙ্গে ভবন মালিকদের সালিস করে ফ্যাক্টরি খুলে দেওয়ার আশ্বাসে আরো ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘মোল্যা নজরুলকে দেওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে ওসি ডিবি জাহিদ ৫০ লাখ টাকা নেন। কিন্তু ফ্যাক্টরি খুলে দিতে দেরি করলে আমি কমিশনার মোল্যা নজরুলকে জানালে, তিনি উপকমিশনার দেলোওয়ার হোসেনকে বলে ফ্যাক্টরি খুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তার এক দিন পর ফ্যাক্টরিতে যেতে বলে সন্ত্রাসী দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নৃশংসভাবে হামলা চালায় এবং হামলার পর আমাকে ভেবে সবাই সরে পড়ে। স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’
ব্যবসায়ী রিয়াজুল বলেন, ‘আমার পরিবার তাত্ক্ষণিক বাসন থানায় অভিযোগ করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং আমি হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমার ফ্যাক্টরির সব মালপত্র, মেশিনারিজ ও ফায়ার পাম্প জেনারেটরসহ যাবতীয় সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ১৫ কোটি টাকা।’
জানা গেছে, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে মোল্যা নজরুল ঢাকা মহানগর (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ডিসি থাকা অবস্থায় আবিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেন। ওই ব্যবসায়ীকে নির্যাতন করে এক কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর নড়াইল এলাকার সরকারদলীয় সাবেক এমপি কবিরুল হক নিজস্ব প্যাডে মোল্যা নজরুলের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার লিখিত অভিযোগ করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। এ ঘটনায় তাঁকে কিছুদিন ওএসডি করে রাখা হয়। এরপর তাঁকে আবারও ভালো স্থানে পোস্টিং দেওয়া হয়।