ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ৫ আগস্টের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য ও মানবিক কার্যক্রম হৃদয় স্পর্শ করেছে মানুষের।বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে হতাহত ও মেডিকেলে চান্স পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি হতে না পারা মেধাবীদের পাশে দাঁড়ানোয় দারুণ প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়েও নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা তুলে ধরছেন মানুষের কাছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের অভিমত, জিয়া পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে বিএনপির রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটে তারেক রহমানের। তবে নিরলস পরিশ্রম, একাগ্রতা ও যে কোনো পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীসহ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের ‘স্বাতন্ত্র্য পরিচিতি’ চিনিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তিনিই আগামীর বাংলাদেশের আশা-ভরসার স্থল।বিএনপির দাবি, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারবিরোধী দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের আন্দোলনে তাদের নেতাকর্মীরা গুম-খুন, হামলা-মামলা এবং অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। নির্যাতিত-নিপীড়িত এসব নেতাকর্মী থেকে তৃণমূল সমর্থকের পাশেও পরম নির্ভরতার ছায়া হয়ে আছেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর রাখছেন। প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিচ্ছেন সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তা, নিচ্ছেন অসহায় অনেক পরিবারের দায়িত্ব। দেড় দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে এসব কার্যক্রম করছেন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে দলের গুম-খুন ও পঙ্গুত্ব বরণকারী নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি। শুরুতে ‘জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’-এর মাধ্যমে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এসব পরিবারের কাছে ঈদ উপহার পাঠানো হয়। এ কাজে ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনও’ সম্পৃক্ত হয়। একপর্যায়ে এই কার্যক্রম আরও গতিশীল এবং কাঠামোবদ্ধভাবে করতে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমনকে আহ্বায়ক এবং কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুনকে সদস্য সচিব করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে একটি সংগঠন গঠন করা হয়, যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান নিজেই। এরপর থেকে সেলের মাধ্যমে দল ও অঙ্গসংগঠনের ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের ঘর নির্মাণসহ সন্তানদের মাসিক শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিধবার ঘর নির্মাণে সহায়তা করা হয়। এখন পর্যন্ত সাতক্ষীরা ও ফেনীতে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি পরিবারের সন্তানের বিয়ের কাজও সম্পন্ন করা হয়।জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বিএনপির গুম-খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার প্রায় ১ হাজার ১৫০ পরিবারের মধ্যে তারেক রহমানের ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৪ সালে এসএসসি পাস করা গুম-খুনের শিকার পরিবারের সন্তানদের শুভেচ্ছা উপহার পাঠানো হয়েছে। আহত নেতাকর্মীদের প্রদান করা হয়েছে চিকিৎসা সহায়তা।ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বন্ধুর মতো আহত-নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ান তারেক রহমান। গত ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চার শতাধিক (আহত-নিহত) পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা যেমন মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, ডেমরা, পুরান ঢাকা, গেন্ডারিয়া, উত্তরা, আগারগাঁও, বাড্ডা, ধামরাইসহ ১৯টি স্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, কক্সবাজার, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, পাবনা, নাটোর, ফরিদপুর, গাজীপুর, দিনাজপুরসহ গত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১ জেলার প্রায় ২০০ শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আহত প্রায় ২০০ জনকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।এ ছাড়া ফেনী ও নোয়াখালীতে বন্যার্তদের সহায়তা প্রদান করা হয়। গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর পড়াশোনার জন্য মাসিক শিক্ষা ভাতা (১০টি), জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চারটি শহীদ পরিবারকে মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। অসুস্থ বিএনপি নেতাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। শহীদ পরিবারের জন্য নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।
এরই মধ্যে নীলফামারী ও ফেনীতে বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে।আজ ফেনীতে আরেকটি নিহত পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তর করা হবে। সামনে কুষ্টিয়া ও মাগুরায় শহীদ পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।ফেনীতে আজ যুবদল নেতার পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তর: বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার যুবদল নেতা শহীদ মোহাম্মদ মাসুদের পরিবার নতুন বাড়ি উপহার পাচ্ছেন। আমরা বিএনপি পরিবারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান এ উপহার দিচ্ছেন। আজ বুধবার সোনাগাজীর চরচান্দিয়া গ্রামে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করবে আমরা বিএনপি পরিবারের প্রতিনিধিদল। আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন তারেক রহমান।বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন কালবেলাকে বলেন, সোনাগাজীতে শহীদ মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে নতুন বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি এদিন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহত ২৭-৩০ পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতাও করা হবে।তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দল-মত নির্বিশেষে গণআন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। সহায়তা কার্যক্রম শেষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিয়ে ঢাকায় বৃহৎ পরিসরে কনভেনশন করা হবে।এদিকে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অসচ্ছল-মেধাবী মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, যারা এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না। এসব গরিব-অসহায় শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসায় মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন তারেক রহমান।জানা গেছে, তারেক রহমানের পক্ষে এই কার্যক্রম তদারকি করছেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।
তিনি কালবেলাকে বলেন, এ বছর অনেকে মেডিকেলে চান্স পেয়েও অর্থনৈতিক কারণে ভর্তি ও পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল। তাদের এমন অসহায়ত্বের কথা সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি তারেক রহমানের নজরে এলে তিনি আমাকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে সহায়তা করছি এবং মেডিকেল বই, কঙ্কাল, অ্যাপ্রোন সরবরাহ করছি। এ ছাড়া বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে যারা প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন, তাদের সঙ্গে এসব শিক্ষার্থীর যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি। এর ফলে সেখানে তাদের সিটের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। এর পরও কোনো সমস্যা হলে যোগাযোগ করতে বলেছি। নিজ নিজ মেডিকেল কলেজে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে। এর অংশ হিসেবে তাদের টিউশনির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থেকে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাদের মন জয়ের নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। মানুষ পছন্দ করে না—এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দেন। অন্যথায় তাদের আইনের হাতে তুলে দেওয়ারও কথা বলেন। তারেক রহমানের এমন বক্তব্য সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।