মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আরোহণ করে সে ধারা বজায় রেখেছেন তিনি। সম্প্রতি চীনের ওপর বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে তার প্রশাসন।
চীন বলেছে, এমন বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ বিজয়ী হয় না। বিশ্লেষকরাও একই সুরে বলছেন, দুই দেশের নাগরিকদের জন্য শুধুই ভোগান্তি বাড়াবে ট্রাম্পের এই শুল্কবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত।
চীনের মতো দুই প্রতিবেশি কানাডা এবং মেক্সিকোর ওপর-ও শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। যদিও এক সমঝোতার আওতায় ওই দুই দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত এক মাসের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে চীনের সঙ্গে তেমন কোনো সমঝোতায় আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই চীনকে এখন ভাবতে হবে, কীভাবে তারা ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্কনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
মুডি’স অ্যানালিটিকসের চীন ও অস্ট্রেলিয়া ইকোনমিকস প্রধান হ্যারি মারফি ক্রুজ বলেন, ‘বাণিজ্য যুদ্ধ যদি শুরু হয়েই যায়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ওপর শুল্ক বাড়াতে পারে চীন বা সেসবের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য নিজেদের বাজার সীমিত করতে পারে তারা। এছাড়া ইউয়ানের অবমূল্যায়নও কাজে দিতে পারে।’
তবে বাণিজ্য যুদ্ধে দিনশেষে কেউই লাভবান হয় না উল্লেখ করে ক্রুজ যোগ করেন, ‘ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বাণিজ্য যুদ্ধের সময় পালটাপালটি শুল্ক আরোপের মতো পদক্ষেপ কারো কাজে আসেনি। উল্টো এর ফলে দুই দেশের-ই প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
এদিকে কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, ট্রাম্পের আরোপিত ১০ শতাংশ শুল্কে আসলে চীনের বড় কোনো ক্ষতি হবে না। পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রতিনিধি ঝ্যাং ঝিওয়েই যেমন বলেছেন, ‘এই ১০ শতাংশ শুল্ক চীনের অর্থনীতির জন্য বড় কোনো দুঃসংবাদ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই চীন তাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তাই এর ফলে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না।’
তাই এখন চীন চাইলে ট্রাম্পের এই আগ্রাসী শুল্কনীতির নাচন দেখেও না দেখার ভান করতে পারে।
কিন্তু ট্রাম্প যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেই থেমে নেই। চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যের ‘বারোটা বাজাতে’ আদাজল খেয়ে নেমেছেন তিনি। এরই মধ্যে চীনের ব্যবসা সম্পর্কে আরও বড় পরিসরে গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আগামী ১ এপ্রিল নাগাদ সে গবেষণা প্রতিবেদন ট্রাম্পের ডেস্কে পৌঁছে দেবেন দায়িত্বশীলরা।
সে প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে চীনের ওপর দ্বিতীয় পর্যায়ের শুল্ক আরোপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প। প্রথম দফায় ট্রাম্পের ১০ শতাংশের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় যদি কিছু না-ও করে চীন, দ্বিতীয় দফায় তাদের কিছু একটা করতেই হবে।
শুল্ক-ঝড় মোকাবিলায় তখন চীনের পদক্ষেপ কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা দিয়ে ইউবিএস-র অর্থনীতিবিদরা বলেন, ‘চীন হয়ত সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে, রয়েসয়ে পালটা পদক্ষেপ নিতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু কৃষিপণ্য, অটো পার্টস এবং বিদ্যুতের ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে ভেবে দেখতে পারে।’