Image description

এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন দক্ষিণী এশীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজনীতিক জোহরান মামদানি। তার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে নিউইয়র্ক শুধু প্রথম মুসলিম মেয়রই পাচ্ছে না, সেই সঙ্গে প্রথম আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মেয়রও পাচ্ছে। যিনি কিনা গত এক শতাব্দীরও অধিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ মেয়র।

 

জোহরান মামদানি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার সাফল্য আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সমগ্র বিশ্বে। সেইসঙ্গে ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতির এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন হয়েছে।

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোহরান মামদানি যদি অভিষেকের আগে হুটহাট তার চুল-দাড়ি-গোঁফ কেটে না ফেলার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তিনি হবেন ১৯১৩ সালে মারা যাওয়া উইলিয়াম জে গেনরের পর নিউইয়র্কের প্রথম দাড়ি-গোঁফে ঢাকা মেয়র। তবে এটি নিশ্চিত করে বলা মুশকিল যে, তারপর কোনো মেয়রের মুখে দাড়ি ছিল না। কিন্তু মেয়রদের অফিশিয়াল প্রতিকৃতিতে দেখা গেছে, তারা সবাই দাড়ি-গোঁফ ছাড়া ছিলেন। এর মধ্যে ডেভিড ডিঙ্কিন্সের গোঁফ ব্যতিক্রম ছিল।

৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানির দাড়ি দেখতে সেই গেনরের মতো হলেও এই তরুণের বিশেষত্ব ভিন্ন। গেন ১৯৯০ সালে যখন নির্বাচিত হন, তখন তার বয়স ছিল ৬০ বছর। ধূসর-সাদা, ছাঁটা দাড়ি ও সিল্কের টুপি একজন পরিণত মানুষ হিসেবে রূপ দিত গেনরকে। ওই সময়ের সংস্কৃতিও ভিন্ন ছিল। গেনরকে নিয়ে ১৯৫১ সালের এক জীবনীতে বলা হয়েছে, তখন যারা পূর্ণ অ্যানডাইক দাড়ি রাখতেন, তাদের কেউ কেউ সমাজে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন। আর এই দাড়ি তাকে একজন সফল ব্যবসায়ী, ওয়াল স্ট্রিটের মধ্যস্থতকারী বা একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে উপস্থাপন করতো।

এদিকে জোহরান মামদানি মাত্র ৩৪ বছরের একজন তরুণ, যিনি মিলেনিয়াল প্রজন্মের প্রতিনিধি। এই তরুণের দাড়ি যেন এখন সেই পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের অঙ্গীকারের প্রতীক। এ হিসেবে তার দাড়ি বর্তমান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বা মধ্য বয়স্ক ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের দাড়ির মতোও নয়। ভ্যান্স ও ট্রাম্প জুনিয়র দু’জনই শ্বেতাঙ্গ। তবে জোহরান মামদানি একজন বাদামি ত্বকের মুসলিম।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্মশ্রমণ্ডিত বা দাড়ি-গোঁফে ঢাকা বাদামি মুসলিম হওয়ার অর্থ কী, সেসব বেশ ভালোভাবেই বোঝেন জোহরান মামদানি। জনমত গঠনের কৌশল কিংবা নিজের ভাবমূর্তি, সবই ভালোভাবে জানেন তিনি।

২০১৩ সালে মেইনের বোডউইন কলেজে শেষ বর্ষে উঠার আগে ‘বিয়ার্ডেড ইন কায়রো’ (কায়রোতে দাড়িওয়ালা) শিরোনামে কলেজের সাপ্তাহিক পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন জোহরান মামদানি। সেখানে তিনি মিসরে তার পড়ালেখার সময়ের ধকল নিয়ে লিখেছিলেন। তখন আরব বসন্তর ধারাবাহিকতায় দেশটিতে মুসলিম ব্রাদারহুডবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন চলছিল।

জোহরান মামদানি ওই প্রবন্ধে লিখেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এক বছর আগেই দাড়ি রাখা শুরু করেছেন তিনি। যা ছিল দেশে প্রচলিত ওই ধারণার বিরুদ্ধে একরকম প্রতীকী প্রতিবাদ, যা খুব একটা প্রকাশ্যে বলা হয় না। তবে অনেকেই মানেন, ‘বাদামি গায়ের রং আর দাড়ি? মানে সন্ত্রাসী!’

কায়রো পৌঁছানোর পর এই তরুণ মেয়র লক্ষ্য করেন, স্থানীয়রা তাকে ইসলামপন্থী ভাবছেন। এ জন্য দাড়ি ছাঁটতে সেলুনে চলে যান। তিনি লেখেন, আমি ওই সময় নিজেকে ভেবেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বর (২০০১) হামলার পর যে অসংখ্য বাদামি বর্ণের নাগরিক দাড়ি কেটে ফেলেছিলেন, তাদের একজন। এরপর প্রায় সময়ই দাড়ি রেখেছেন তিনি। তবে ২০২২ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য পরিষদ সদস্য হিসেবে প্রথম মেয়াদে থাকার সময় কিছুদিনের জন্য গোঁফ রেখেছিলেন। এরপর থেকে ফের পূর্ণ দাড়ি রেখেছেন এই তরুণ।

জোহরান মামদানি মেয়র নির্বাচনের প্রচারণার সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমোর সমর্থকরা তার দাড়িকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন। জুনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমেরির সময় অ্যান্ড্রু কুমোকে সমর্থনকরা একটি সুপার পিএসি প্রচারের জন্য পোস্টার তৈরি করছিল, আর সেখানে জোহরান মামদানির ছবিকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়, যেখানে তার দাড়ি অধিকতর ঘন ও কালো দেখিয়েছে। এতে অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে জোহরান মামদানির সমর্থকরা প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

এ ব্যাপারে এই তরুণ মেয়র বলেন, আমার দাড়ি ঘন ও কালো করে উপস্থাপন করা হচ্ছে বর্ণবাদী ধারণাকে উসকে দেয়া। যা আমাকে হুমকি হিসেবে তুলে ধরার এক চেষ্টা। কেননা, অ্যান্ড্রু কুমো ও তার ব্যর্থ প্রচারকে টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করা দাতারা ভয় পেয়েছেন।