গত কয়েক বছরে ইরান তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক অস্ত্র বাজারে প্রবেশ করেছে এবং বিশ্বশক্তির সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। দেশটির ড্রোনগুলি এর প্রধান উদাহরণ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখন বিভিন্ন দেশ হয় ইরানের তৈরি 'শাহেদ' সিরিজের মতো মডেল কিনতে চাইছে, অথবা তাদের নকশা অনুকরণ করতে চাইছে।
একইভাবে, যদিও এখনও খোলা বাজারে পাওয়া যায় না, কিন্তু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জুনে আন্তর্জাতিক মনোযোগ কাড়ে এবং বিস্ময় সৃষ্টি করে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র আমেরিকান, ইউরোপীয়, আরব এবং ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একাধিক স্তর ভেদ করে অধিকৃত অঞ্চলের লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হানে। তবে ইরানের অগ্রগতি কেবল আকাশেই সীমাবদ্ধ নয়। সমুদ্রেও দেশটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে, যা এই সপ্তাহে করাচিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মেরিটাইম এক্সপো অ্যান্ড কনফারেন্সে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
চার দিনের এই ইভেন্টে ৪৪টি দেশ অংশ নেয়। ইরানকে একটি বড় প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এতে দেশটির নৌবাহিনী (আর্তেশের অংশ) এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি যৌথ দল অংশ নে এবং এর নেতৃত্বে ছিলেন ইরানের নৌ কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি।
"ইরানের প্যাভিলিয়নটি কিছু দিক থেকে স্বাগতিক দেশের চেয়েও ভালো অবস্থানে ছিল। আমাদের কাছে বিভিন্ন সামুদ্রিক ও নৌ সরঞ্জাম ছিল, যার সবকটিই ইরানের তরুণদের তৈরি," বলেন ক্যাপ্টেন দারিউশ এস্কান্দারি। তাকে ব্যক্তিগতভাবে ইরানি এই প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহরাম।
ইরান শেষ পর্যন্ত সেরা বিদেশি প্রদর্শকের পুরস্কার জিতেছে। ক্যাপ্টেন এস্কান্দারি তেহরান টাইমসকে বলেন, অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল যে, ইরান সম্পূর্ণরূপে নিজেদের উদ্যোগে এত উন্নত জাহাজ ও সাবমেরিন তৈরি করেছে — যা কয়েক দশকের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলস্বরূপ অর্জিত স্বনির্ভরতার মাত্রা।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, "সামুদ্রিক শিল্পে, দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা না করা বা তাদের জলযান তৈরির জন্য কেবল নিজেদের সরঞ্জামের উপর নির্ভর করা অত্যন্ত বিরল ঘটনা। আমাদের নৌকা, বাণিজ্যিক জাহাজ, যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিনে আমরা যা ব্যবহার করি তার ৯০ শতাংশের বেশি ইরানিদের তৈরি। অন্যান্য দেশে এই সংখ্যা সাধারণত মাত্র ৩০%।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই স্বনির্ভরতা থাকা সত্ত্বেও, তাদের প্রযুক্তি বিশ্বের সেরা প্রযুক্তির সমকক্ষ রয়েছে।
ইরানের নৌ-সম্পদগুলোর মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তা হলো - সিনা-শ্রেণি, যা নির্ণায়ক আঘাত হানার জন্য শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজ এবং মোজ-শ্রেণি, যা দ্রুত উপকূলীয় টহলের জন্য পরিচিত।
সহযোগিতা ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করতে প্রদর্শনীর ফাঁকে ইরানের প্রতিনিধি দল গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছে। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা বিশেষভাবে ফলপ্রসূ হয়েছে।
ক্যাপ্টেন এস্কান্দারি ব্যাখ্যা করেন, "আমরা ইরান এবং পাকিস্তান উভয় স্থানে যৌথ জাহাজ নির্মাণ লাইন চালু করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা অন্যান্য দেশের সাথেও ফলপ্রসূ বৈঠক করেছি, যেখানে অনেকে আমাদের সামুদ্রিক শিল্প এবং এর সম্ভাব্য সুবিধা সম্পর্কে আরও জানতে চেয়েছিলেন।"
তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে করাচিতে ইরানের উপস্থিতি অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক অংশীদারিত্বের জন্য উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্রঃ তেহরান টাইমস