Image description
 

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। ওয়াশিংটনে তিনি দেখা করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে—যার সঙ্গেই তিনি ২০১৮ সালের সফরে বৈঠক করেছিলেন।

 

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সফরে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের মতো একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে চান। ইসরাইলের সাম্প্রতিক দোহা হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাতারের সঙ্গে এমন একটি নির্বাহী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে কাতারের আল-উদেইদ এলাকায়। বর্তমানে সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেও ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সৌদি নেতৃত্বাধীন অবরোধের মুখে ছিল কাতার। সেই সময় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মতাদর্শিক বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিমানঘাঁটি রয়েছে, যেগুলো মূলত লোহিত সাগরের পাশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত।

প্রতিবেদনটি বলছে, সাম্প্রতিক আঞ্চলিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা আরও জোরদার করতে আগ্রহী।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সৌদি আরব জানে যে তারা এখন এক অত্যন্ত সহায়ক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পেয়েছে।

ট্রাম্পের প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বিদেশ সফরই ছিল সৌদি আরবে। তিনি সবসময় আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন—বিশেষ করে যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমর্থন দেয়। মানবাধিকার ইস্যুতে সৌদি আরবের সমালোচনা করা থেকেও তিনি বিরত থেকেছেন।

ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনার, যিনি এই মাসে গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা তৈরিতে যুক্ত ছিলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আর্থিক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তার বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান অ্যাফিনিটি পার্টনার্স সম্প্রতি সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের সঙ্গে মিলে গেমিং জায়ান্ট ইলেকট্রনিক আর্টস (ইএ) কিনে নিয়েছে।

  

এই সম্পর্ক ট্রাম্প ও মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে এক নাটকীয় মোড় নির্দেশ করে—বিশেষত যখন বাইডেন প্রশাসনের সময় ক্রাউন প্রিন্সকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রায় ‘অবাঞ্ছিত’ হিসেবে দেখা হতো। তবে তখনও বাইডেন নিজে রিয়াদ সফর করেছিলেন বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর অনুরোধ জানাতে।

কোভিড–১৯ মহামারি এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে তখন যুক্তরাষ্ট্র কঠিন সময় পার করছিল।

সে সময় থেকেই দুই দেশ সৌদি আরবকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এ যুক্ত করার জন্য নেপথ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল, যদিও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে সেই আলোচনা থেমে যায়।

বর্তমানে যুদ্ধবিরতি আংশিকভাবে কার্যকর থাকলেও ইসরাইলের গাজায় বর্বরতা এবং গত দুই বছরে সাতটি দেশে বিমান হামলার কারণে নভেম্বরের বৈঠকে ওই চুক্তি সম্প্রসারণের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

২০১৮ সালের সফরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল জাঁকজমকভাবে। তিনি রাজনীতি, প্রযুক্তি ও হলিউডের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন। তখন তাঁকে সৌদি আরবের এক আধুনিক ও সংস্কারপন্থি নেতার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

তবে সেই ভাবমূর্তি ভেঙে পড়ে একই বছরের অক্টোবরে, যখন সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে হত্যা করা হয়—যা ক্রাউন প্রিন্সের নির্দেশেই ঘটেছে বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়।