
সেনাসমর্থিত জেন-জি বিক্ষোভের মুখে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও দেশটির জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ক্ষমতা হারানোর শঙ্কায় তিনি এ পদক্ষেপ নিলেও এটি মাদাগাস্কারের রাজনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে আসেন আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। লাইভেই একটি ডিক্রি প্রকাশ করে তিনি সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর কিছুক্ষণ আগেই তার বিরুদ্ধে অভিশংসন (ইমপিচমেন্ট) ভোট হওয়ার কথা ছিল।
মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা রেডিও এবং টেলিভিশনে প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেক পোস্টে পলাতক প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, দেশের ‘শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতেই’ তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা সিটেনি র্যান্ড্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় পরিষদের সভাপতি জাস্টিন টোকেলেকে পরামর্শ না করে সংসদ ভেঙে দেওয়া সম্পূর্ণ বে-আইনি।
সোমবার ওই লাইভে রাজোয়েলিনা ‘রাজনৈতিক ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাকে হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগ তোলেন। রাজোয়েলিনা বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আমার জীবননাশের চেষ্টা এবং সেনা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা চলছে। একদল সেনা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। তিনি জীবনের নিরাপত্তার কারণে দেশ ছেড়েছেন এবং এখন একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ অবস্থান করছেন।
কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশজুড়ে বিদ্যুৎ ও পানির তীব্র সংকট ঘিরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা পরে সরকার ও প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেন জি আন্দোলনকারীরা রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবি করে রাজপথে নেমে আসে। রাজোয়েলিনা এসব দাবিকে উপেক্ষা করে বলেন, এই সব সমস্যার একটাই সমাধান-বর্তমান সংবিধানকে শ্রদ্ধা করা। যদি আমরা তা না করি, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যাবে। আমি সমাধান খুঁজে বের করার মিশনে আছি।
রোববার একটি ফরাসি সামরিক বিমানে করে দেশ ছাড়েন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়ে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ‘সমঝোতার’ পর তিনি দেশত্যাগ করেন। ফরাসি সেনাবাহিনীর একটি কাসা বিমান তাকে মাদাগাস্কারের সান্ত মেরি বিমানবন্দর থেকে তুলে নেয়।
এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর মাদাগাস্কারে বিক্ষোভের সূচনা হয়। দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও মৌলিক সেবার ঘাটতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে জেন-জি আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। তরুণদের বিক্ষোভে মাদাগাস্কারের সরকার টালমাটাল হয়ে পড়ে।
এই আন্দোলনে যোগ দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। বিশেষ করে ক্যাপস্যাট নামে একটি অভিজাত ইউনিট আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পরই রাজোয়েলিনা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।