
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনুস শহরে সোমবার হাজারো ফিলিস্তিনি উল্লাসে ফেটে পড়েন, যখন আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের বাসে করে প্রায় এক হাজার ৭০০ প্রাক্তন বন্দিকে ফিরিয়ে আনা হয়।
ধীরে চলা বাসগুলোর পাশে অনেকে উঠে পড়েন, কেউ প্রিয়জনকে চিনে জড়িয়ে ধরেন, কেউবা চুমু খেয়ে স্বাগত জানান—নাসের হাসপাতালে জড়ো হওয়া জনসমুদ্র তখন আনন্দে উত্তাল।
উত্তর গাজার ২৫ বছর বয়সী মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি ইউসেফ আফানা বললেন, ‘সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো আমার পুরো পরিবারকে আমাকে স্বাগত জানাতে একসঙ্গে দেখা।’
তিনি জানান, তিনি ১০ মাস কারাগারে কাটিয়েছেন, যা ছিল জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর একটি।
তিনি আরো বলেন, ‘জেলে কষ্ট শুধু শারীরিক নয়, আত্মার ভেতরেও যন্ত্রণা থাকে।’
তিনি আশাবাদী যে শিগগিরই ইসরায়েলের কারাগারে আটক বাকি ফিলিস্তিনিরাও মুক্তি পাবেন।
নাসের হাসপাতালে বন্দিদের নামানো হচ্ছিল ইসরায়েলি কারা পরিষেবার ধূসর পোশাক পরিহিত অবস্থায়। মাঠে তখন দেশপ্রেমের সঙ্গীত বাজছিল, আর ফিলিস্তিনি পতাকার পাশে উড়ছিল হামাস ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের পতাকাও।
মুখোশ পরা সশস্ত্র পুরুষেরা শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়া জনতার মাঝে তা ছিল প্রায় অসম্ভব।
‘সেই স্মৃতিগুলো মুছে ফেলতে চাই’
গাজার রিমাল এলাকার ৩২ বছর বয়সী শাদি আবু সিদু অভিযোগ করেন, কারাগারে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মুক্তির ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্তও আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা সেই বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলো মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু করতে চাই।
যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে মুক্তি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের অংশ হিসেবে এই বন্দি বিনিময় ঘটে।
প্রায় এক হাজার ৭০০ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যারা যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গাজা থেকে আটক হয়েছিলেন এবং আরো ২৫০ জন নিরাপত্তা বন্দি, যাদের মধ্যে অনেকে ইসরায়েলি নাগরিক হত্যার দায়ে দণ্ডিত।
গাজায় বন্দি ইসরায়েলিদের বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের মুক্তি দিতে সম্মত হয়।
রামাল্লায়ও উল্লাস
অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরেও প্রায় ১০০ বন্দির আরেকদলকে স্বাগত জানাতে বিপুল জনতা জড়ো হয়।
কেউ বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছিলেন, কেউবা ক্লান্ত দেহে সাহায্য নিয়ে বাস থেকে নামছিলেন—কিন্তু সবার চোখে একই আবেগ।
দীর্ঘ কারাবাসের পর পিতা-মাতার সঙ্গে প্রথম রাত কাটাতে যাওয়া মাহদি রমজান বলেন, ‘এ অনুভূতি বর্ণনাতীত, যেন এক নতুন জন্ম।’
কাছেই আত্মীয়রা আলিঙ্গনে কাঁদছিলেন, তরুণরা আনন্দে কপাল ঠেকাচ্ছিল একে অপরের সঙ্গে, কেউ কেউ অচেতন হয়ে পড়ছিলেন—বছরের পর বছর, কখনও দশকের পর, প্রিয়জনের সঙ্গে পুনর্মিলনের সেই উত্তেজনায়।