Image description
 

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ফের জ্বলে উঠেছে উত্তাপ। এবার মুখোমুখি দুটি মুসলিম দেশ—পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির খবর মিলেছে উভয় দিক থেকেই। তবে প্রশ্ন উঠেছে—এই সংঘাতের নেপথ্যে কি ভারতের ভূমিকাই কাজ করছে?

 

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল ভারত। তখন নয়া দিল্লি তালেবানকে দেখত ‘সন্ত্রাস ও মৌলবাদের আশ্রয়স্থল’ হিসেবে। অথচ আজ সেই তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী আট দিনের সফরে দিল্লিতে। যা একসময় ছিল সম্পূর্ণ কল্পনাতীত, এখন তা বাস্তব।

মুত্তাকীর সফরকে বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির নতুন অধ্যায়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর-এর সঙ্গে বৈঠক শেষে নয়া দিল্লি ঘোষণা করেছে, চার বছর আগে বন্ধ হওয়া কাবুল দূতাবাস আবারও খুলবে।
এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় নীতিতে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

 

যে ভারত একসময় পশ্চিমা-সমর্থিত আশরাফ গনির সরকারের দৃঢ় মিত্র ছিল, সেই ভারত এখন তালেবান সরকারের সঙ্গে ‘বাস্তববাদী সম্পর্ক’ গড়ে তুলছে। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রহ্মচেলানী বলছেন, “এই সফর পাকিস্তানের জন্য এক ধাক্কা, এবং তালেবান সরকারের কার্যত স্বীকৃতির দিকে ভারতের একটি বড় পদক্ষেপ।”

 

ঠিক এমন সময়েই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে শুরু হয়েছে ভয়াবহ সংঘাত। শনিবার রাতভর গোলাগুলিতে দুই শতাধিক যোদ্ধার প্রাণহানি হয়েছে বলে দাবি ইসলামাবাদের। অপরদিকে কাবুল দাবি করছে, তারা তিনটি সীমান্তচৌকি দখল করেছে এবং অর্ধশতাধিক পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে।

পাকিস্তানের অভিযোগ—তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) আফগান ভূমি ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে তাদের দেশে। বিপরীতে তালেবান সরকারের অভিযোগ, পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে বিমান হামলা চালিয়েছে।
কাতার ও সৌদি আরব ইতিমধ্যে মধ্যস্থতা করছে, কিন্তু দুই পক্ষের আগ্রাসী ভাষা বুঝিয়ে দিচ্ছে—এই উত্তেজনা এত সহজে প্রশমিত হবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকটে ভারতের অবস্থান এখন কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে দুইটি লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করছে—
১️⃣ পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে চাপে রাখা।
২️⃣ আফগানিস্তানের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশের নতুন দরজা খুলে ফেলা।

নয়া দিল্লি ইতিমধ্যে তালেবান সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছে যে আফগান ভূমি ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না। বিনিময়ে ভারত আফগানিস্তানে বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তা বাড়াচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই ভূরাজনীতিক টানাপোড়েন এক নতুন বাস্তবতার জন্ম দিচ্ছে।
যে ভারত একসময় তালেবানকে সন্ত্রাসী বলত, সেই ভারতই এখন তাদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে। তবে সম্পর্ক যতই বাস্তববাদী হোক, দুই পক্ষই এখনো সতর্ক। ভারতের লক্ষ্য প্রভাব বিস্তার, আর তালেবানের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।