
যুক্তরাজ্যকে ইরাক যুদ্ধে জড়ানো টনি ব্লেয়ার গাজায় শান্তি আনতে পারবেন? কয়েকদিন ধরেই এমন প্রশ্ন ঘুরপাঁক খাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শাসন পরিকল্পনায় নাম এসেছে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারেরও। ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী শাসন ও পুনর্গঠনে ব্লেয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
নতুন এই পরিকল্পনায় গাজাকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী ও ট্রাম্প-ব্লেয়ারের নেতৃত্বাধীন একটি ‘বোর্ড অব পিস’ গঠন হবে। ২০ লাখের বেশি মানুষের অঞ্চলটিতে শাসন ও পুনর্গঠনের তদারকি করবে এই আন্তর্জাতিক বোর্ড।
হামাস জানিয়েছে, তারা প্রস্তাবটি নিজেদের মধ্যে এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে পরে প্রতিক্রিয়া জানাবে।
বিতর্কিত ইতিহাস
গাজা ইস্যুতে টনি ব্লেয়ারের সম্পৃক্ততা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তার সমর্থকরা মনে করেন, ব্লেয়ারে তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবেন।
তবে সমালোচকরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে যুক্তরাজ্যকে যুদ্ধে যুক্ত করেছিলেন ব্লেয়ার, যা পরে ভ্রান্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত হিসেবে সমালোচিত হয়। সেই যুদ্ধে এক লাখেরও বেশি ইরাকি নিহত হন। যুক্তরাজ্যের ১৭৯ এবং যুক্তরাষ্ট্রের চার হাজারের বেশি সেনাও প্রাণ হারান।
অতীত ব্যর্থতা
২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর ব্লেয়ার মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছিলেন ‘কোয়ার্টেট’-এর হয়ে (যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও জাতিসংঘ)। তবে তিনি বড় কোনো সাফল্য দেখাতে পারেননি। ২০১৫ সালে ওই পদ ছাড়তে হয় তাকে।
তারপরও সাম্প্রতিক সময়ে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় যুক্ত ছিলেন ব্লেয়ার। তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে ‘সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও নিজ দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে নিশ্চিত করেননি।
বিভক্ত প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টার্মার যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও ব্লেয়ারের সম্পৃক্ততা নিয়ে মন্তব্য করা এড়িয়ে গেছেন। যুক্তরাজ্যে ব্লেয়ার এখনও বিতর্কিত। তিনবারের নির্বাচনী জয় ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের গুড ফ্রাইডে চুক্তির স্থপতি হিসেবে কৃতিত্ব পেলেও ইরাক যুদ্ধের জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে।
তবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং বলেছেন, সংশয় থাকলেও শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে ব্লেয়ারের। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাইকেল স্টিফেন্সের মন্তব্য, ‘এতে ২০০৩ সালের ছায়া আছে, তবে যদি যুদ্ধবিরতি আনে, সেটা খারাপ বিকল্প হবে না।’
গাজাবাসীর তীব্র আপত্তি
ব্লেয়ারের মতো বিতর্তিক ব্যক্তির হাতে শাসনভার তুলে দেওয়ার ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন গাজার বাসিন্দারা। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি হুসেইন দাহের বলেন, ‘ব্লেয়ারকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। তার হাতে ইরাকিদের রক্ত লেগে রয়েছে।’
গাজা সিটির শিক্ষক উম্মে মুহাম্মদ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিদের কেন নেতৃত্বে রাখা হলো না? তিনি এখানে ঘৃণিত একজন। আমাদের জন্য কিছুই আনতে পারবেন না।’
সূত্র: এপি, ইউএনবি