Image description

বন আইন উপেক্ষা করে কবরস্থানের ৭৯টি গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঈদগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম ওই গাছ কেটে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। কবরস্থানটি বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন জায়গায় হলেও তাদের কোনো অনুমোদন না নিয়েই গাছ কাটা হয়। সেই গাছ বিক্রি করে দেয়া হলেও কবরস্থান ব্যবস্থাপনা কমিটির কেউ বিষয়টি জানেন না।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অধীন ঈদগাঁও উপজেলার মেহেরঘোনা রেঞ্জের মেহেরঘোনা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার ওই আওয়ামী লীগ নেতা লোক লাগিয়ে মেহেরঘোনা কবরস্থানের ৭৯টি আকাশ মণি গাছ কেটে ফেলেন।

অভিযোগ উঠেছে, ওই সব গাছ তিনি (ছৈয়দ আলম) নিজে লাগিয়েছিলেন দাবি করে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই কেটে নিয়েছেন। এলাকাবাসির অভিযোগ, তিনদিন আগে ঘটনাটি ঘটলেও লোকজন মেহেরঘোনা বন বিট জানিয়েও কোন প্রতিকার পাননি।

স্থানীয় সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী মিজবাহ উদ্দিন জানান, কবরস্থানটি বন বিভাগের জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত। আশপাশের সব জনবসতির মরদেহ এই কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে মেহেরঘোনা কবরস্থানে গাছের চারা রোপন করেছিলেন। এ গুলো তার ব্যক্তি মালিকানাধীন ছিল না।

মেহেরঘোনা কবরস্থান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও স্কুল শিক্ষক কামরুল হক চৌধুরী জানান, তিনি গাছ কাটার বিষয়ে কিছু জানেন না। তিনি দেশে ছিলেন না। আমি আমেরিকায় ছিলাম। মেয়ের কাছে গিয়েছিলাম। মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছি। এখনো ঢাকাতেই আছি। এলাকায় যাইনি। তাই বিষয়টি আমার নজরে নেই।

এ বিষয়ে জানতে বনবিভাগের মেহেরঘোনা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ইসমাঈল হোসেনের মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও কল রিসিভ করেননি।

তবে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বনের হোক, ঘরের হোক, গাছ কাটার আগে বনবিভাগের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু তারা কোনো অনুমতি নেয়নি। ইতোমধ্যে গাছ ফেরত আনতে তাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ছৈয়দ আলম বলেন, আমি তিন বছর ধরে অসুস্থ। লিভার সিরোসিসে ভোগছি। বেশ কয়েকবার আমাকে ভারত যেতে হয়েছে। কয়েকদিন চট্টগ্রামে আইসিইউতেও কাটাতে হয়েছে। আমি বিছানায় পড়ে আছি। গাছ গুলো আমিই লাগিয়েছিলাম। কথা ছিল, গাছ কাটলে বিক্রির টাকা অর্ধেক পাবেন গাছের মালিক, বাকি অর্ধেক পাবে কবরস্থান ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটির সভাপতি দেশে ছিলেন না। তিনি ঢাকায় এসেছেন। এলাকায় ফিরলে তাকে কবরস্থানের টাকার অংশ বুঝিয়ে দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগ নেতা ছৈয়দ আলম জানান, গাছ কাটতে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়, সেটি তার জানা ছিল না। রেঞ্জ অফিসার তাকে ফোন করেছিলেন। গাছ কাটতে কবরস্থান কমিটির রেজুলেশন কপি বনবিভাগকে দিতে বলা হয়েছে। কমরু (কবরস্থান কমিটির সভাপতি) এলাকায় ফিরলে তার দস্তখত নিয়ে কাগজ বন বিভাগে জমা দেয়া হবে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে গেছেন। বন কর্মকর্তারা হয়তো এতক্ষণে সব গাছ জব্দ করেছেন।