
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল ১০টা বেজে ৫৫ মিনিট। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি হাসানুল হক ইনুকে তোলা হয় আসামির কাঠগড়ায়। মিনিট কয়েক পরই এজলাসে প্রবেশ করেন তাঁর আইনজীবী। প্রথমে সালাম বিনিময়, কিছুক্ষণের আলাপ শেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এই আসামি হাসিমুখে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে দেখান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষের এমন দৃশ্যে ইনুর চেহারায় অনুশোচনা বা অনুতাপের কোনো ছাপ চোখে পড়েনি। অথচ জুলাই আন্দোলনে চলা হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতার পেছনে অন্যতম পরিকল্পনাকারী এই জাসদ সভাপতি। শেখ হাসিনাকে মারণাস্ত্র ব্যবহারের উসকানিদাতাও তিনি— এমনটিই উঠে এসেছে মামলার বিভিন্ন নথি পর্যালোচনায়।
শুধু ইনুই নন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হওয়া বিভিন্ন মামলার আসামিদের চেহারায়ও প্রায়শই হাসির দেখা মেলে। আদালতে হাজিরা দিতে এসে কেউ কেউ আবার নানান মন্তব্যেরও জন্ম দেন। তবে, অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, পরাজিতরা সবসময় নিজেদের ভুলের ঊর্ধ্বে থেকেই নিজেদের বিচার করেন। এ ধরনের অপরাধীরা রাজনীতির অংশ হিসেবেই গ্রেপ্তার কিংবা কারাগারকে বেছে নেন।
নেই অপরাধবোধ , হাসিমুখে আইনজীবীকে মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখান ইনু
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে চলতি সপ্তাহে পরপর দুদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর মধ্যে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২৯ সেপ্টেম্বর তাকে হাজিরের নির্দেশ ছিল। এদিন সকালে প্রিজনভ্যানে করে সাবেক এই মন্ত্রীকে ট্রাইব্যুনালে আনে পুলিশ। তার মাথায় ছিল হেলমেট আর গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে প্রথমে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর নেওয়া হয় আসামির কাঠগড়ায় এবং বসানো হয় নির্দিষ্ট চেয়ারে।
তখন সময় ছিল সকাল ১০টা ৫৫ মিনিট। সেসময়ও ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল আসেননি। তবে, প্রসিকিউশন ও অন্য মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যেই এজলাসে ঢোকেন ইনুর আইনজীবী হয়ে লড়তে আসা নাজনীন নাহার। তার সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন। প্রথমে সালাম বিনিময় করেন তারা। একপর্যায়ে ইনুর উদ্দেশ্যে নাজনীন নাহার বলে ওঠেন— ‘চিন্তা করবেন না। ভাবির সঙ্গে কথা হয়েছে। ভাবি ভালো আছেন।’
প্রত্যুত্তরে তেমন কিছু না বললেও মুখে বেশ হাসি ছিল এই আসামির। একপর্যায়ে আইনজীবীকে মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখান তিনি। এমন দৃঢ়তায় তার ভেতরে অপরাধবোধের বিন্দুমাত্র কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। সময় তখন ১১টা ৭ মিনিট। ঠিক তিন মিনিট পর ১১টা ১০ মিনিটে আদালতকক্ষে আসেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। বাকি সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
পরে সবার অনুমতিক্রমে শুরু হয় প্রসিকিউশন পক্ষের শুনানি। ট্রাইব্যুনালে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী নাজনীন নাহার। এ সময় ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ওপর শুনানির জন্য এক সপ্তাহ সময় চান প্রসিকিউশন। তবে আরও বেশি সময়ের আবেদন করে আসামিপক্ষ। পরে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ নিয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ফের ইনুকে হাজতখানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে প্রিজনভ্যানে চড়ে কারাগারে ফিরতে হয় তাকে।
ইনু-হাসিনার ফোনালাপ : আন্দোলনকারীদের গুলি, বোম্বিংয়ের নির্দেশনার ইঙ্গিত
একের পর এক মামলা কাঁধে নিয়ে বছরখানেক ধরে কারাগারে দিন কাটছে এক সময়ের প্রতাপশালী মন্ত্রী ইনুর। এর মধ্যেই নিজ জেলা কুষ্টিয়ায় ছয়জনের প্রাণহানি আর জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় সহযোগিতাসহ সুনির্দিষ্ট আটটি অভিযোগ এনে ২৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এসব অভিযোগ ওই দিনই আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-২। একই সঙ্গে জারি করা হয় প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে ইনুর জড়িত থাকার বর্ণনা বিভিন্ন মাধ্যমে উঠে এসেছে, যার দালিলিক প্রমাণও মিলেছে। এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার একাধিক ফোনালাপও ট্রাইব্যুনালে শোনানো হয়েছে। এসব কথোপকথনে আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলি ছোড়া কিংবা হেলিকপ্টারে সরাসরি বোমাবর্ষণ (বোম্বিং) করার নির্দেশনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ইনুর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে জমা দেওয়া আটটি অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রথম থেকেই আন্দোলন ভিন্নখাতে নেওয়ার নীলনকশা আঁকতে থাকেন হাসানুল হক ইনু। আর কৌশল হিসেবে বেছে নেন ভারতীয়সহ দেশীয় কিছু গণমাধ্যম। এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের ১৮ জুলাই ভারতের মুম্বাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘মিরর নাউ’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত ও সন্ত্রাসী-জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করে সর্বোচ্চ বলপ্রয়োগের উসকানি দেন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এই নেতা।
১৯ জুলাই গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে হওয়া সভায়ও অংশ নেন ইনু। ১৪ দলীয় জোটের ওই বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত তথা নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে দমনে ‘শ্যুট অ্যাট সাইট’ নির্দেশনা কার্যকরেও ভূমিকা রাখেন তিনি।
এছাড়া, ২০ জুলাই দুপুর সোয়া ১২টায় আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে নিজ জেলা কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে আন্দোলনকারীদের ছবি দেখে তালিকা প্রণয়নসহ ব্যবস্থা নিতে ফোনে নির্দেশ দেন। তার এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশসহ ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়েন তৎকালীন এসপি। তাদের গুলিতে শহীদ হন শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী ও চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ। আহত হন অসংখ্য নিরীহ মানুষ। অনেককে আটক করেও নির্যাতন চালানো হয়।
শুধু এসপিই নন, শেখ হাসিনাকেও পরামর্শ দিতেন ইনু
শুধু নিজ জেলার পুলিশ সুপারই (এসপি) নন, শেখ হাসিনাকেও বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন হাসানুল হক ইনু। এজন্য জুলাই আন্দোলনজুড়ে তৎকালীন সরকারপ্রধানের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন জাসদের এই সভাপতি। আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, ছত্রীসেনা নামানো, হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি ছুড়ে হত্যা, বোম্বিং, আটক-নির্যাতনের ষড়যন্ত্র কিংবা পরিকল্পনা; সব ধরনের উসকানি দিয়ে শেখ হাসিনাকে নির্দেশনা দিতেন ইনু।
গত বছরের ২৭ জুলাই বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতে আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত, সন্ত্রাসী-জঙ্গিসহ বিভিন্ন তকমা লাগিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। একইসঙ্গে কারফিউ জারির মাধ্যমে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ড সংঘটনসহ নির্যাতন-নিপীড়নকে কৌশলে সমর্থন করেন।
এছাড়া, ওই বছরের ২৯ জুলাই শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে হওয়া জোটের আরেকটি সভায় উপস্থিত ছিলেন ইনু। সেখানেও নানা উসকানি দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের প্রস্তাব দেন। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র ক্যাডারদের হত্যাকাণ্ড আর নির্যাতনকে বৈধতা দেন এই আসামি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের একদিন আগে ৪ আগস্ট কারফিউ জারি করে গুলি ছুড়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যাসহ শেখ হাসিনার গৃহীত সব পদক্ষেপে সমর্থন করেন তিনি। আর এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও ষড়যন্ত্র-সহায়তায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন টেলিফোনে। নির্দেশ দেন নিজ দলের নেতা-কর্মীদেরও।
সবশেষ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা জানান কুষ্টিয়ার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। সেদিন সকালে তারাও নেমে আসেন রাজপথে। কিন্তু শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এবং ইনুর ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও নির্দেশে পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়েন। আর এতে শ্রমিক-ব্যবসায়ীসহ ছয়জনের তাজা প্রাণ নিভে যায়।
অনুশোচনার বদলে দেখা যায় হাস্যোজ্জ্বল চেহারা : ড. তৌহিদুল
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পটপরিবর্তনের কারণে এ ধরনের মামলার সুষ্ঠু বিচার হয় না। ক্ষমতার পালাবদলে এসব মামলার বিচার হয় না, বরং মীমাংসিত হয়ে যায়। গত বছরের ৫ আগস্টের পরও আমরা এমনটা দেখেছি। রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক মামলাকে হয়রানিমূলক হিসেবে দেখেন। এজন্য বিগত সরকারের আমলে বিরোধী মত বা দলের বিরুদ্ধে হওয়া বেশিরভাগ মামলাই খুব দ্রুতগতিতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অনেকে খালাসও পেয়েছেন।
তবে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হওয়া এই মামলাগুলো হয়তো প্রত্যাহার বা মীমাংসা হতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু বিচারকাজে সহনশীল আকার ধারণ করবে। একটা সময় গিয়ে দেখা যাবে, যারা এখন কারাগারে আছেন, তারা একে একে ছাড়া পাচ্ছেন। ফলে, যারা সত্যিকারের অভিযুক্ত, তাদের সেই বিচারটা হবে না। এর কারণ হলো, এই গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে অনেকের বিরুদ্ধেই হয়রানিমূলক মামলাও হয়েছে, যার আইনগত ভিত্তি দিনশেষে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গুম-খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগের দায়ে বর্তমানে তৎকালীন সরকারের বহু প্রভাবশালী কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু আদালতে হাজিরা দিতে এলে তাদের অনেকেরই হাস্যোজ্জ্বল চেহারার দেখা মেলে। সুযোগ পেলে ছোটখাটো মন্তব্যও করেন।
‘তারা নিজেদের মতো আছেন বলে ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে জুলাই-আগস্টে তাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্দেশে হওয়া গণহত্যা নিয়ে কোনো অনুশোচনা লক্ষ্য করা যায় না। এর পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, রাজনীতিবিদরা এসব রাজনীতিরই অংশ মনে করেন। দ্বিতীয়ত কারাগারে পাওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।’
মানহীন নির্বাচন, প্রশ্নবিদ্ধ কারা-সুবিধা পুনর্বিবেচনার পরামর্শ
ড. তৌহিদুল হক বলেন, রাজনীতিবিদদের ধারণা হলো, দাবি-দাওয়া নিয়ে সৃষ্ট সহিংসতায় হতাহত হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। তাদের মতে, এর মাধ্যমেই এক পক্ষ ক্ষমতায় বসে এবং অন্য পক্ষ পরাজিত হয়। তাই রাজনীতির অংশ হিসেবে তারা মারণাস্ত্র, বোমাবাজি বা গ্রেনেডের ব্যবহারকে খুব সাধারণ বলে মনে করেন, এবং এর জন্য তাদের কোনো অনুশোচনাও নেই।
‘এছাড়া, কারাগারে অতীত ও বর্তমানের সুযোগ-সুবিধাগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে হবে। কেননা এখনকার প্রেক্ষাপটে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে যারা কারাগারে রয়েছেন, নৈতিকভাবে তাদের ডিভিশন দেওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ বিগত তিনটি নির্বাচন কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হয়নি; জয়ী হওয়া বা ক্ষমতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যা প্রয়োজন ছিল, তাই করা হয়েছিল।’
এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, প্রবীণ রাজনীতিবিদদের জন্য কারাগার অনেকটা আরামদায়ক। কেননা ক্ষমতা ও অর্থ থাকলে বন্দিজীবন সুরক্ষিত হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, ‘এখানেই ভালো আছেন’— এমন ভাব তাদের চেহারায় ফুটে ওঠে। এক্ষেত্রে কারারক্ষীরাও কিছু ক্ষেত্রে দায়ী, কারণ তারা এমন লোকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। আর এই চর্চা বহু আগ থেকেই রয়েছে।
‘এছাড়া, হাসানুল হক ইনুদের কাছে এসব প্রেক্ষাপট খুব সহজ। আন্দোলনে কে মারা গেল, কার রক্ত ঝরল, কতজন নিহত-আহত হলো— এমন সবকিছুই তারা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেন। মূলত এই দুই কারণেই তাদের মাঝে অপরাধবোধ বা অনুশোচনা সৃষ্টি হয় না।’
তবে, ইনুর বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ, আন্দোলন দমনে নানাভাবে উসকানিসহ আরও সুনির্দিষ্ট অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাই কারাগারে তাকে সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আরও ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।