Image description

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যামূলক আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই প্রতিহিংসামূলক হত্যাযজ্ঞে বিশ্বজুড়ে নিন্দা কুড়িয়েছে দেশটি। তা সত্ত্বেও, প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে অন্ধ সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্তব্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

রুবিওর সফর ও পশ্চিম দেওয়ালে প্রার্থনা

দোহায় হামাসের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় অঞ্চলজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দিতে ইসরায়েল সফরে এসেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

সফরের অংশ হিসেবে তিনি জেরুসালেমে  ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রস্থান 'পশ্চিম দেওয়ালে' (ওয়েস্টার্ন ওয়াল) প্রার্থনায় যোগ দেন।

ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক রুবিওর সঙ্গে প্রার্থনায় যোগ দেন ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

এক ইভানজেলিকাল প্রোটেস্টান্ট যাজক দুই মার্কিন কূটনীতিক ও ইসরায়েলি নেতার মাথায় ইহুদিদের ধর্মীয় টুপি কিপ্পা পরিয়ে দেন। এরপর তারা পশ্চিম দেওয়ালে হাত রেখে নীরবে প্রার্থনা করেন। 

পশ্চিম দেওয়াল স্পর্শ করছেন তিন নেতা। ছবি: এএফপি
পশ্চিম দেওয়াল স্পর্শ করছেন তিন নেতা। ছবি: এএফপি

৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ইহুদি বিদ্রোহ দমন করার সময় 'সেকেন্ড টেম্পল (দ্বিতীয় মন্দির)' নামের পবিত্রস্থানটি ধ্বংস করে। পরবর্তী এর ধ্বংসাবশেষ মাটির নিচ থেকে খুঁড়ে বের করা হয়।

প্রথার অংশ হিসেবে ওই অবশিষ্টাংশ পরিদর্শনে যান রুবিও ও হাকাবি।

ভূগর্ভস্থ ওই পবিত্রস্থানে তিন নেতা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ছবি তোলেন। ইহুদি ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে স্ত্রীরা পশ্চিম দেওয়ালে যেতে পারেননি।

রুবিও, নেতানিয়াহু ও হাকাবির সঙ্গে তাদের স্ত্রীরা। ছবি: এএফপি
রুবিও, নেতানিয়াহু ও হাকাবির সঙ্গে তাদের স্ত্রীরা। ছবি: এএফপি

নেতানিয়াহুর বক্তব্য

এ সময় গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে নেতানিয়াহু রুবিওকে 'ইসরায়েলের অসামান্য বন্ধু' বলে আখ্যা দেন। 

তিনি মত দেন, এর আগে কখনোই এতোটা ঘনিষ্ঠ হয়নি দুই দেশের সম্পর্ক।

নেতানিয়াহু বলেন, 'আমি মনে করি রুবিওর সফর ইসরায়েল-আমেরিকান মৈত্রীর সহনশীলতা ও শক্তিমত্তার বড় প্রমাণ।'

'দুই দেশের এই সম্পর্ক পশ্চিম দেওয়ালের পাথরের মতোই শক্তিশালী ও টেকসই—যেটা আমরা মাত্রই ছুঁয়ে এসেছি', যোগ করেন তিনি।

নেতানিয়াহু বলেন, রুবিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে 'এই মৈত্রী সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে এবং আমরা তার জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই।'

কাতারে হামলার প্রভাব শূন্য

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারের রাজধানীতে বিমান হামলার বিষয়ে ইতোমধ্যে রুবিও ও ট্রাম্প উভয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

কাতারে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস কর্মকর্তাদের জানাজায় অংশ নিচ্ছেন দেশটির আমির। ছবি: এএফপি
কাতারে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস কর্মকর্তাদের জানাজায় অংশ নিচ্ছেন দেশটির আমির। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের দাবি, হামলার লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নেতারা।

এর আগে রুবিও জানান, তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে কাতারের হামলা নিয়ে কথা বলবেন। তবে এতে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। 

গত মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। 

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই হামলাকে 'অপরাধমূলক হামলা' বলে নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক সব আইন ও নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, 'ইসরায়েল এই হামলার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছে।'

হামাসের একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়া প্রতিনিধি দলটি ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিল।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর ডেপুটি চেয়ারম্যান খলিল আল-হাইয়া ও অন্যান্য নেতাদের হত্যায় ইসরায়েলি চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য সুহাইল আল-হিন্দি।

হামলায় খলিল আল-হাইয়া অক্ষত থাকলেও তার ছেলে হুমাম ও এক শীর্ষ সহযোগী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।