Image description
 

উত্তর কোরিয়া আবারো বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। পিয়ংইয়ং এর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে দেশটির নেতা কিম জং উন একটি বিশাল মনিসন্স বা গোলাবারুদ কারখানা পরিদর্শন করছেন। এখানেই চলছে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির নতুন সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় লাইন, যা উত্তর কোরিয়ার সামরিক আধুনিকায়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। চীন সফরে যাওয়ার আগের দিন তিনি এ কারখানা পরিদর্শন করেন।

 

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানায়, কিমকে ব্রিফ করা হয় একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় প্রোডাকশন লাইনের ওপর। এখানে কাঁচামাল প্রস্তুতি থেকে শুরু করে এয়ার ফ্রেম, কম্পোনেন্ট উৎপাদন, টেস্টিং এবং ফাইনাল অ্যাসেম্বলি—সবকিছু একই ব্যবস্থার মধ্যে সম্পন্ন হচ্ছে। এতে উৎপাদন ক্ষমতা এবং মান নিয়ন্ত্রণ দুই ক্ষেত্রেই বড় অগ্রগতি এসেছে। কিম নিজে বলেছেন, দেশের অষ্টম পার্টি কংগ্রেসের নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার লক্ষ্য এই কারখানার মাধ্যমে পূরণ হয়েছে। এখন নবম পার্টি কংগ্রেসের দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন লক্ষ্যের প্রস্তুতি নিতে হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়নহাপ জানিয়েছে, কারখানার অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে এটি চীনের সীমান্ত ঘেঁষা চাগাং প্রদেশে অবস্থিত, যা উত্তর কোরিয়ার বহু অস্ত্রশিল্পের কেন্দ্র।

 

কৌশলগত গুরুত্ব

 

গত কয়েক বছর ধরে জাতিসংঘের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া কৌশলগত অস্ত্রভান্ডার ক্রমাগত বাড়িয়েছে। দীর্ঘপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসনিক অস্ত্র এবং পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনক্ষম সিস্টেম তৈরি করে যাচ্ছে দেশটি। এতে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে প্রতিদিনই। যুক্তরাষ্ট্রও তার মিত্রদের সঙ্গে যৌথভাবে পিয়ংইয়ং-এর মোকাবেলায় প্রস্তুতি জোরদার করছে। কিম জং উনের যুক্তি, এসব অস্ত্রই তাদের জাতীয় নিরাপত্তার একমাত্র নিশ্চয়তা।

মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালকের ২০২৫ সালের হুমকি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিম ক্রুজ মিসাইল থেকে শুরু করে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকেল পর্যন্ত নানা অস্ত্র তৈরি চালিয়ে যাবেন। এর উদ্দেশ্য হলো মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সরাসরি ঝুঁকিতে ফেলা।

চীন সফর ও ভূরাজনৈতিক বার্তা

এদিকে, কারখানা পরিদর্শনের পরপরই কিম জং উন চীনে পৌঁছেছেন। সেখানে এক বিরল দৃশ্যে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতারা একই মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে এটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নতুন এক ঐক্য শক্তির প্রতীক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দৃশ্য কেবল সামরিক প্রদর্শনী নয়, বরং একটি সুস্পষ্ট ভূরাজনৈতিক বার্তা। যে বার্তা যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ।

উত্তর কোরিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং কিম জং উনের বেইজিং সফর মিলিয়ে পরিষ্কার হচ্ছে যে, তিনি শুধু দেশীয় উৎপাদনশক্তি জোরদার করছেন না, বরং বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য নিয়েও কৌশলগত বার্তা দিচ্ছেন।