Image description

যখন অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়ে ভারতের শাসক বিরোধী নানান স্বর চড়াচ্ছে তখন ভারতের প্রখ্যাত লেখিকা সৈয়দা সাইয়্যেদিন হামিদা বলেছেন, ‘আমরা সবাই মানুষ, বাংলাদেশিরাও তো মানুষ। পৃথিবীটা এত বড়, সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকরাও কেন ভারতে থাকতে পারেন।

তারা কি ভারতীয় স্বত্তা নষ্ট করছে? হামিদা একসময় ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যও ছিলেন।

সম্প্রতি আসামের সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং অবৈধ অভিবাসী বলে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যত হয়েছে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার। তখন ‘আসাম নাগরিক সন্মিলন’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন হামিদা ও তার নেতৃত্বে একটি দল। বর্তমানে আসাম সফর করেছেন তারা। দলের অন্য প্রতিনিধিরা হলেন, প্রশান্ত ভূষণ, হর্ষ মন্দার, জওহর সরকার এবং অন্যান্যদের মতো সুপরিচিত বাম মনোভাবাপন্ন বিশিষ্টরা।

সেই আসাম রাজ্যেই রোববার গণমাধ্যমের কর্মীদের সাথে আলাপকালে সৈয়দা হামিদা অভিযোগ করেন যে, ‘আসাম সরকার মুসলমানদের ওপর বাংলাদেশি বলে তকমা লাগিয়ে তাদের উপর সর্বনাশ ডেকে এনেছে। ’

হামিদের বক্তব্য, ‘তারা যদি বাংলাদেশিই হয়, তবে ভুলটা কোথায়? বাংলাদেশিরাও তো মানুষ। পৃথিবীটা এত বড়, বাংলাদেশিরা এখানে থাকতেই পারে। ওরাতো কাউকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে না। যেভাবে বলা হচ্ছে যে, এই অবৈধ অভিবাসীরা দেশের বৈধ নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, এটা বলাটা খুবই বিরক্তিকর, অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এবং মানবতার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ’

সৈয়দা হামিদ আরও বলেছেন, ‘ওরাও (বাংলাদেশি) তো মানুষ। আল্লাহ এই পৃথিবীকে মানুষের জন্য তৈরি করেছেন, শয়তানের জন্য নয়। যদি কেউ পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী এটা ভয়ঙ্কর। আসামের গোয়ালপাড়ার মতে, আমি যেখানে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে থাকি, সেখানেও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সন্ধানে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। ’

সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা দিয়ে হামিদা বলেছেন ‘আমরা হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, মুসলিম সব ধর্মের মানুষদের জন্য। আমাদের সবাইকে ভারতের সংস্কৃতির মেলবন্ধনকে রক্ষা করতে একত্রিত হতে হবে। ’ তার অভিযোগ ‘এই সরকার (বিজেপি) সবাইকে মেরে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, কিন্তু আল্লাহ বা ভগবান কখনই এদের ক্ষমা করবে না। একদিন না একদিন এই এই ভয়ঙ্কর অবস্থার শেষ হবে। ’

এর আগে গত ১৫ আগস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবস এবং গত ২২ আগস্ট কলকাতায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘অনুপ্রবেশের ফলে যেভাবে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে, তাতে সামাজিক সংকট তৈরি করছে। কৃষকদের বোকা বানিয়ে তাদের জমি লুট করা হচ্ছে, আদিবাসীদের বঞ্চিত করে ওদের জমি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশ আর সহ্য করবে না। ’

যদিও কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে অযথা হেনস্তা করা হচ্ছে। কিছু কিছুক্ষেত্রে তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক করে রাখা হচ্ছে, আবার কখনো বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করা হচ্ছে।

তবে বিরোধীদের এই বক্তব্যের মাঝে ১৪ আগস্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, যারা  অবৈধভাবে বসবাস করছে, তাদের বিরুদ্ধে ভারত সরকার ব্যবস্থা নিক। কিন্তু সেই অনুপ্রবেশ রুখতে গিয়ে বাংলার বাঙালিদের ওপর অত্যাচার মেনে নেবো না। আর এমন পরিস্থিতিতর সায়েদা হামিদার এই মন্তব্যে ফের বিতর্কে শুরু হয়েছে ভারতে।