
ভবিষ্যতে একটি শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেইনকে রাশিয়ার কাছে ভূমি ছাড় দিতে চাপ দেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কূটনীতিক কায়া কাল্লাস।
ইউক্রেইনকে দেওয়া ভূমি ছাড়ের প্রস্তাবকে পুতিনের পাতা ফাঁদ হিসাবেই দেখছেন তিনি।
বিবিসি টুডে প্রোগ্রামে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাল্লাস বলেন, রাশিয়াকে ইউক্রেইনের ভূখণ্ড ধরে রাখতে দেওয়া হল ‘একটি ফাঁদ। পুতিন আমাদেরকে এই ফাঁদে ফেলতে চান।”
হোয়াইট হাউজে ইউক্রেইন এবং ইইউ নেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পর প্রথম বিবিসি টুডে প্রোগ্রামে এই সাক্ষাৎকার দেন কাল্লাস।
তিনি বলেন, রাশিয়ার নেতা তার সেনাবাহিনীর আগ্রাসন বন্ধের জন্য ইউক্রেইনের কাছ থেকে ছাড় চাইছেন। তার দাবি মেনে নেওয়া হলে তা হবে এমন একটি দেশকে পুরষ্কৃত করা, যারা লড়াই শুরু করেছে।
সাম্প্রতিক আলোচনার কথা উল্লেখ করে কাল্লাস বলেন, “গোটা আলোচনাটাই হয়েছে ইউক্রেইনের কী ছাড় দেওয়া উচিত এবং তারা কী ছাড় দিতে ইচ্ছুক তা নিয়ে। যেখানে আমরা ভুলেই গেছি রাশিয়া এখন পর্যন্ত একটি ছাড়ও দেয়নি। অথচ এখানে আগ্রাসন চালানো দেশ তারাই। তারা আরেক দেশে নৃসংশ হামরা চালাচ্ছে এবং মানুষ মারছে।”
পূর্ব ইউক্রেইনের ডনবাস অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়া দাবি করে আসছে । যেখানে সংঘাতের কারণে গত এক দশকে ১৫ লাখ ইউক্রেইনীয়কে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে।
ইউক্রেইন বারবার জানিয়েছে, শান্তির বিনিময়ে এ অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক বৈঠকে ‘ভূমি বিনিময়’ এর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন।
ক্রেমলিনের ‘ওয়ান্টেড লিস্টে’ থাকা কাল্লাস বলেন, ইউক্রেইনের জন্য নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তিনি স্বীকার করেছেন যে, শান্তি আলোচনার এই পর্যায়ে এখন পর্যন্ত ইউক্রেইনের জন্য কোনও প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলতে খুব বেশি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
কাল্লাসের কথায় “সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হল শক্তিশালী ইউক্রেইনীয় সেনাবাহিনী গড়ে তোলা। এমন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা তৈরি করতে হবে যা শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে না।”
তিনি বলেন, কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং রাষ্ট্রগুলোকে নির্ধারণ করতে হবে যে তারা কী অবদান রাখতে পারবে। তবে সেই বাহিনী কীভাবে কার্যকর হবে সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজে আলোচনায় ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ফিনল্যান্ডের নেতারা অংশ নেন।
তার আগে ট্রাম্প আলাস্কার একটি সামরিক ঘাঁটিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।
কাল্লাস বলেন, “আলাস্কা বৈঠক থেকে পুতিন সবকিছু পেয়ে গেছেন। সেটি একটি শান্তি চুক্তির জন্য তার আলোচনায় আগ্রহে প্রভাব ফেলবে। বৈঠকে তাকে (পুতিন) যেভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে, সেটিই তার চাওয়া ছিল।
“তিনি চেয়েছিলেন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না হোক, সেটিও তিনি পেয়েছেন। পুতিন আসলে হাসছেন, হত্যা থামাচ্ছেন না বরং বাড়াচ্ছেন। আমরা ভুলে যাচ্ছি যে, রাশিয়া একটিও ছাড় দেয়নি।”
কাল্লাস জানান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ইইউ ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ তৈরি করেছে।
ওদিকে, বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেইন শান্তি আলোচনা মূল্যায়নে তিনি দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন।
এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমি বলব দু’সপ্তাহের মধ্যে আমরা জানতে পারব, হ্যাঁ বা না। এর পর হয়ত আমাদেরকে ভিন্ন কৌশল নিতে হবে।”
কিন্তু পুতিন বৈঠকে বসবেন কিনা তা নিয়ে জেলেনস্কি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবেই শান্তি বৈঠক এড়াচ্ছে। “রাশিয়ার বর্তমান সংকেতগুলো, সৎভাবে বলতে গেলে অশোভন। তারা বৈঠক এড়াতে চাইছে। তারা এই যুদ্ধ শেষ করতে চায় না।”
জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদেরকে আহ্বান জানান, সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে স্পষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কাঠামো চূড়ান্ত করার।