Image description

রাজীব হাসান

দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছি দৈনিক প্রথম আলো-তে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রমোশন পেলাম—আমাকে ডেপুটি স্পোর্টস এডিটর করা হলো। অথচ মাত্র দুই মাসের মাথায় ১৭ বছরের সাংবাদিকতা ছেড়ে দিলাম। কেন?

বেতন ভালো ছিল। বিনয় নিয়ে বলি, ভালো লিখতাম, ভালো এডিটও করতাম। অফিস আমার মেধা ও পরিশ্রমকে মূল্যায়নও করেছে সব সময়। তবু চাকরি ছেড়েছিলাম একটাই আশঙ্কায়—৫০–৫৫ বছর বয়স পেরিয়ে গেলে শরীর টিকিয়ে রাখতে যে ওষুধটুকু কিনতে হবে, যদি সেটা কিনতে না পারি? মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ যদি জোগাতে না পারি?

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার দাদা পারেননি। এরশাদের স্বৈরশাসন যার কলমকে থামাতে পারেনি, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে অন্যতম প্রতিভাধর সেই বিভু’দা, জীবনের শেষ লেখা লিখে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন।

নতুন প্রজন্ম হয়তো তাঁর নামই শোনেনি। কিন্তু আমরা জানি—বিভুরঞ্জন সরকার কী ছিলেন।

আজকাল সাংবাদিকতা নিয়ে জেন-জিরা ট্রল করে। বাস্তবতাও ভয়ঙ্কর—যমুনা টিভির চেয়ে Anwar TV বেশি পপুলার হয়ে ওঠে। মিডিয়ার নামে দালালি, দলাদলি আর প্লট-ফ্ল্যাটের গল্প শোনা যায়। কিন্তু এ-ও তো সত্যি, কয়েক হাজার সাংবাদিকের মধ্যে কতজন মাসের পর মাস বেতন পান না? ছয় মাস কাজ করেও এক মাসের বেতন মেলে—এটাই এখন বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ মিডিয়া হাউসের চিত্র।

একটা নতুন, ভালো ইনভেস্টমেন্টের পত্রিকায় চাকরি নিয়ে এক সাংবাদিক দম্পতি সংসার শুরু করেছিলেন। স্ত্রী প্রথম সন্তানের ভ্রূণের রিপোর্ট হাতে নিয়ে বাসায় ফিরেছেন, আর স্বামী ফিরেছেন অফিস থেকে সবাইকে ছাঁটাইয়ের চিঠি নিয়ে। এটা কোনো গল্প নয়—এটাই সাংবাদিকতার বাস্তবতা।

আমি এখানে মিডিয়ার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ লিখতে বসিনি, কিংবা ঝুঁকি নিয়ে অন্য পথে সফল হওয়ার মোটিভেশনাল গল্প শুনিয়ে হাততালি পেতেও চাই না। আমি শুধু লিখতে চাই এক লাইন: ভালো থাকবেন বিভু’দা, দেখা হবে।

আর একটাই মিনতি—কয়েকজনের লোভ, অনিয়ম বা দালালির দায় পুরো সাংবাদিক সমাজের ঘাড়ে চাপাবেন না। কারণ কে জানে, আপনার গালি হয়তো কারও সেদিনের একমাত্র আহার হয়ে দাঁড়াবে।

রাজীব হাসান: কথাসাহিত্যিক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক