
গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের কান্না বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গুম কমিশনকে পাবলিকলি নিয়ে আসা ও গণশুনানি করতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। এটার জন্য তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে ‘মায়ের ডাক’-এর আয়োজনে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষ্যে ‘মানববন্ধন ও চিত্র প্রদর্শনী’র অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের একটা দাবি ছিল এসব ঘটনার বিচার করতে হবে। আমরা এইটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, এই বাচ্চাগুলোর সঙ্গে আমরা সারাক্ষণ আছি; তুলির (সানজিদা ইসলাম তুলি) মায়ের সঙ্গে সারাক্ষণ আছি। যতক্ষণ পর্যন্ত না এদের বিচার চূড়ান্ত হবে আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব।
প্রথম দিন থেকে এই গুম হওয়া পরিবারের সঙ্গে আছি বলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে আছি। আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ছয় বছর মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক থেকেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্বাসিত হয়ে ছিলেন, এখনো আছেন।
গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের কষ্টের বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, আন্দোলনে নামা অনেকেই গুম হয়ে গেলেন। এক পরিবারের সাতজন পর্যন্ত গুম হলো। স্বজনহারা ছোট বাচ্চাদের দেখলে কষ্ট হয়। কারণ তাদের একসময় আরও ছোট অবস্থায় দেখেছিলাম। আজ তারা বড় হয়েছে।
‘বিচারের জন্য ভোট চাই’
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচন অবশ্যই চায়, এই বিচারকে (গুমের ঘটনার) নিশ্চিত করার জন্য, বিচারগুলোকে ত্বরান্বিত করার জন্য। আমাদের কাছে গুম বা ডিজএপিয়ারেন্স বিষয়টা বই বা খবরের কাগজের একটা তথ্য ছিল। এই অনুষ্ঠানে একজন বলল যে, ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে এটা হয়। আমাদের দেশে এটা (গুম) আগে ছিল না। এই প্রথম দানব হাসিনা সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এই গুম এদেশে নিয়ে এসেছে। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, আমাদের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে, ১৭‘শ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত তার কোনো সদুত্তর পাইনি।
‘হাসিনার বিচার করতেই হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই প্রত্যাশা করব যে, আমাদের এই শিশুগুলো যারা পিতা হারিয়েছে, বোনেরা যারা ভাই হারিয়েছে, মায়েরা যারা সন্তান হারিয়েছে তাদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য বের করে নিয়ে আসবে এই সরকার। সে যেই হোক না কেন, যারাই হোক না কেন, যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, এর চেয়ে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ আর কিছু হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ‘ইনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স’ হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে একটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং সেই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আজকে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, হাসিনা এই হত্যাকাণ্ড ও গুমের জন্য দায়ী, তার বিচার অবশ্যই হতে হবে। এই দেশের মাটিতে হতে হবে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে।
জনগণের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না, আজ পর্যন্ত হয়নি উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এর প্রমাণ আপনারাই আন্দোলন করে সেটাকে সফল করেছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের গুম ঘটনার তদন্ত সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদও জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘মায়ের ডাক’ এর প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন।