
ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নতুন এক বিতর্ক উসকে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কড়া অবস্থান। দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্যানেশ কুমার আজ সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—কংগ্রেস নেতা ও সংসদের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে তার ভোট চুরির অভিযোগের প্রমাণে একটি হলফনামা জমা দিতে হবে অথবা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এই সিদ্ধান্তের জন্য তাকে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কমিশন।
রাহুল গান্ধী সম্প্রতি বিহারের সাসারাম থেকে ১,৩০০ কিলোমিটারের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরু করেছেন। সেখান থেকেই তিনি অভিযোগ করেন, বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনী তালিকায় ইচ্ছাকৃতভাবে গড়মিল করা হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, একাধিক নামে একই ভোটার, মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তির নাম তালিকায় থাকা, একই ঠিকানায় শতাধিক ভোটার, এবং নতুন ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ফর্ম–৬-এর অপব্যবহার চলছে। তিনি দাবি করেছেন, এ সবই বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা।
এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করেছে কমিশন। গ্যানেশ কুমারের কথায়, হলফনামা দিতে হবে অথবা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তৃতীয় কোনও বিকল্প নেই।
তিনি আরও সতর্ক করে বলেছেন, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রমাণ না দিলে বোঝা যাবে অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন। কমিশন ইতিমধ্যেই দাবি করেছে, বিহারের প্রতিটি বিধানসভা আসনের জন্য ভোটার তালিকা আইন মেনেই তৈরি হচ্ছে এবং সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।
কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক খসড়া তালিকা থেকে ৬৫ লাখ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। যারা মারা গিয়েছেন, ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন বা একাধিক জায়গায় ভোটার হিসেবে নাম রয়েছে, তাদেরই বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি।
অন্যদিকে, কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে এর মধ্যেই অনেক বৈধ ভোটার বাদ পড়েছেন। সুপ্রিম কোর্টও এই ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করেছে এবং কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে, যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের আপত্তির ক্ষেত্রে আধার নম্বর গ্রহণ করতে হবে।
দেশের সংসদ থেকে শুরু করে রাস্তার রাজনীতি—সব জায়গাতেই এই ইস্যু এখন তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সরকার পক্ষ যেখানে কমিশনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছে, বিরোধীরা সেখানে ‘ভোট চুরির’ চক্রান্তের অভিযোগ তুলছে।
আন্তর্জাতিক মহলেও ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার এই অস্থিরতা নজর কাড়ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনের আগে এই বিতর্ক আরও উত্তপ্ত আকার নিতে চলেছে